ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিসিআইসির সার বহনে নারাজ জাহাজ মালিকরা

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৯ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
বিসিআইসির সার বহনে নারাজ জাহাজ মালিকরা

ঢাকা: বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) বিদেশে থেকে আমদানি করা সার পরিবহনে গররাজি জাহাজ মালিকরা। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি মাত্র জেটিতে সার খালাস করতে হয়। সার খালাসে জেটির স্বল্পতা ও সেকেলে ম্যানুয়াল পদ্ধতির কারণে অযথা সময়ক্ষেপণ হয়। সার নিয়ে জাহাজগুলোকে দীর্ঘদিন সমুদ্রে অপেক্ষমান থাকতে হয়।

এসব কারণে বাইরের জাহাজ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে সার নিয়ে আসতে রাজী নয়। এ বিষয়ে সরকারের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন  বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্ত‍ঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে তিনি একথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রণালয় সূত্র বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এসময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল ও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বিসিআইসি চেয়ারম্যান ওই বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশের কৃষিকাজের অপরিহার্য উপাদান সার উৎপাদন ও আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের ঘাটতি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনে প্রায়শই সার কারখানাগুলো বন্ধ রাখতে হয়। এ কারণে প্রতিবছরই বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে সার আমদানি করতে হয়। কিন্তু সার খালাসে সময়ক্ষেপণ, গভীর সমুদ্রে সারবাহী জাহাজগুলোর দিনের পর দিন অপেক্ষা এবং একটি মাত্র জেটিতে সনাতনী পন্থায় সার খালাসের কারণে জাহাজগুলোকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এতে সরকারের সার আমদানির খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি জাহাজ মালিকদের কথাও শুনতে হয়।

এটা এখন বড় এক ক্রনিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দ্রুত বন্দরের আধুনিকায়ন করে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে সার খালাসের ব্যবস্থা না নিলে এবং নতুন জেটি তৈরি না করলে ভবিষ্যতে দেশের কৃষিখাত বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল এসময় বৈঠকে উপস্থিতদের জানান, দেশের অর্থনীতি যেভাবে বড় হয়েছে, সেভাবে বাড়েনি চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য জাহাজিকরণ ও খালাসের সুবিধা। একটিমাত্র জেটি দিয়েই নানা বাল্ক পণ্য জাহাজ থেকে খালাস করতে হয়। দেশের অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে গম, ডাল, চিনি, তেল পণ্যের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

তবে তিনি দাবি করেন, সরকার হাত গুটিয়ে বসে নেই। বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ ও জেটি নির্মাণের কাজ চলছে। সবাইকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে। এরই মধ্যে নতুন একটি জেটি অপারেশন শুরু করবে। একইসঙ্গে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য জাহাজিকরণ এবং খালাসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজও চলছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৮ সালের পর এ সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।

এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানান, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকার এবং তথাকথিত তত্ত্বাধায়ক সরকারের দুই বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে তেমন কোনো কাজই করা হয়নি। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণেরর পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। কিন্তু সেই সময়ে নেওয়া নানা প্রকল্প বিভিন্ন জটিলতায় শুরু হতে সময় লাগে। এখন সেইসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বন্দরের জন্য অনেক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। আরো যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ চলছে। সরকার এরই মধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণ্েও উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন জেটি নির্মাণের কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মংলা সমুদ্রবন্দরের আধুনিকায়ন ও ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বন্দরে জাহাজ চলাচল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি পায়রা সমুদ্রবন্দর তৈরির কাজও চলছে। ফলে দ্রুত সময়েই সব ধরনের সমস্যা সমাধান হবে।

এদিকে বিসিআইসিসূত্র জানায়, বর্তমানে বিসিআইসির সার পরিবহনকারী জাহাজগুলোকে গড়ে ২২ থেকে ২৫ দিন বন্দরে বসে থাকতে হয়। এজন্য প্রচুর জরিমানা দিতে হয় জাহাজ কোম্পানিগুলোকে। তারপরও জাহাজ মালিকরা সার নিয়ে চট্টগ্রামে আসতে চান না। এতে প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একদিকে এ কারণে যেমন সারের আমদানিরব্যয় বাড়ছে, তেমনি ঝুঁকিতে পড়ছে বন্দরের ভাবমূর্তি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
আরএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।