ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৩ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

ঢাকা: আলোচিত এক-এগারো (১/১১) পরবর্তী সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। 

৮৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।  

ফলে ওই অর্থ এখন ব্যবসায়ীদের ফেরত দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

গত ১৬ মার্চ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে চূড়ান্ত রায়টি দেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা আবেদন খারিজ করে দেন ।

১৫ মার্চ এ বিষয়ে শুনানি শেষ হয়। ব্যবসায়ীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করীম। ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।

আহসানুল করিম রায়ের পরে বাংলানিউজকে জানান, যারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, তারা তাদের অর্থ ফেরত পাবেন। তবে কিভাবে এবং কতোদিনের মধ্যে তারা অর্থ ফেরত পাবেন, আদালতের বিস্তারিত রায়ে সে বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।

ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম বলেন, এতোগুলো টাকা সরকার কোথা থেকে ফেরত দেবে, তা চিন্তার বিষয়। এখন সরকার যদি রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে রিভিউ হবে।

বিভিন্ন সূত্র মতে, ওই সময়ে ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকার বেশি নেওয়ার খবর প্রকাশিত হলেও হাইকোর্টে কেবল ১১টি রিট করা হয়। যারা রিট করেন, এখন কেবল তারাই এ সুবিধা পাবেন। ওই ১১টি রিটের বিপরীতে মোট অর্থ হলো ৬১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জরুরি অবস্থার সময়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করেন। এ টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ০৯০০ নম্বর হিসাবে জমা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে নানা ধরনের আলোচনা হয়।

পরে এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করে টাকা দেওয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

২০১০ সালের ২৪ আগস্ট তাদের অর্থ তিন মাসের মধ্যে ফেরতের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপিল করলে তা স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।

দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা টাকা আদায় করা হয় ওই সময়। বসুন্ধরা গ্রুপের নামে প্রথমে ৭৭ কোটি টাকা ৯টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ২০০৭ সালের ২৮ মে সরকারের হিসাবে জমা পড়ে। এরপর একই বছরের ২৮ অক্টোবর ১০০ কোটি টাকা আদায় করা হয়। ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল ও ১১ জুন যথাক্রমে আরও ৭৩ কোটি টাকা ও তিন কোটি টাকা নেওয়া হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের নামেও বাংলাদেশ ব্যাংকে তিন কোটি টাকা জমা হয়। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ে ছাড়াও একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা চার দফায় আরও ৪৭ কোটি টাকা জমা নেন।

২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল জেমস ফিনলের কাছ থেকে আদায় করা ১১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকার ১৬টি পে-অর্ডার বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের কনসোলিডেটেড ফান্ডের ওই হিসাব নম্বরে জমা দেওয়া হয়। ২২ এপ্রিল একই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৫টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে আরও ১২০ কোটি ২৪ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়।

একইভাবে দেড় বছর ধরে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট হিসাবে টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে ১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, এবি ব্যাংকের ১৯০ কোটি টাকা, এবি ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি টাকা, আমিন মোহাম্মদফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যমুনা গ্রুপের ৩০ কোটিটাকা, এমজিএইচ গ্রুপের ২৪ কোটি টাকা, এলিট পেইন্টের ২৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, কবির স্টিল মিলসের ৭ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩৯ কোটি টাকা, কনকর্ড রিয়েল এস্টেটের সাত কোটি টাকা, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৮ কোটি টাকা, স্বদেশ প্রপার্টিজের ৯ কোটি টাকা, পিংক সিটির ছয় কোটি ৪১ লাখ টাকা, আশিয়ান সিটির এক কোটি টাকা, সাগুফতা হাউজিংয়ের দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা, হোসাফ গ্রুপের ১৫ কোটি টাকা, পারটেক্স গ্রুপের ১৫ কোটি টাকা এবং ইসলাম গ্রুপের কাছ থেকে ৩৫ কোটি টাকা আদায় করা হয়।

অন্যদিকে ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর কাছ থেকে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা, ব্যবসায়ী নূর আলীর কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকা,ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের কাছ থেকে ১৭ কোটি টাকা, আবুসুফিয়ানের কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা, শওকত আলী চৌধুরীর কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের কাছ থেকে ১৫ কোটি টাকা, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সালিমুল হক কামালের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা, ওয়াকিল আহমেদের কাছ থেকে ১৬ কোটি টাকা, তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের কাছ থেকে ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক পারভীন হক সিকদারের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা আদায় করা হয়।

এর বাইরে আরও কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে অর্থ আদায় করা হয়েছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।