ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফাঁসলেন সিটি ব্যাংক ম্যানেজার, অব্যাহতি গ্রাহকের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
ফাঁসলেন সিটি ব্যাংক ম্যানেজার, অব্যাহতি গ্রাহকের

ঢাকা: কর্মকর্তার আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত না দিতে গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড। সেই মামলা থেকে গ্রাহককে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে উল্টো অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন ম্যানেজারের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, গ্রাহক সৈয়দ আখলাক মিয়া লন্ডন প্রবাসী। তার এফডিআরের ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সিলেটের জিন্দাবাজার শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মো. মুজিবুর রহমান ও আখলাক মিয়ার নামে মামলা করেছিল সিটি ব্যাংক।



২০১৭ সালের ৯ মে সিলেট বিভাগীয় স্পেশাল জজ ফাহমিদা কাদেরের আদালত সিটি ব্যাংকের দাখিল করা অভিযোগে ২ নম্বর আসামির অপরাধে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ‍অব্যাহতি দিয়েছেন। তবে মুজিব‍ুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের যথেষ্ট উপাদান বিদ্যমান থাকায় অব্যাহতি না দিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।

আখলাক মিয়ার আইনজীবী ইয়াসমিন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকের ম্যানেজার মো. মুজিবুর রহমান ও গ্রাহক সৈয়দ আখলাক মিয়া আলাদাভাবে অভিযোগ গঠনের দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন। আদালত আখলাক মিয়াকে অব্যহতি দিলেও মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন।
 
সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার পাহাড়িয়া উত্তর পীর মহল্লার সৈয়দ আখলাক মিয়া ২০০৮ সালের ১২ জুলাই জিন্দাবাজার শাখায় ৭০ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত সুদ হার (এফডিআর)  (হিসাব নং-৪১২২১৮৯৪০৫০০১) করে লন্ডনে চলে যান।

২০০৯ সালে দেশে ফিরে ব্যাংকে গিয়ে আখলাক জানতে পারেন তার হিসাবের বিপরীতে লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫শ টাকা। তখনও ম্যানেজার এফডিআরের ম‍ূল কাগজপত্র আখলাক মিয়াকে বুঝিয়ে দেননি। ব্যাংকের সেফ কাস্টডিতে আছে বলে ম্যানেজার জানান।

২০১০ সালের জুলাই মাসে আবার দেশে ফিরে জানতে পারেন মুজিবুর রহমান ঢাকায় বদলি হয়েছেন। তখন নতুন ম্যানেজারের অনুরোধে আরও ২২ লাখ টাকার এফডিআর করেন। পরের বছর সিটি ব্যাংক থেকে চিঠি দিয়ে আখলাক মিয়াকে জানানো হয় তার হিসাবটি বন্ধ করা হয়েছে।

ব্যাংকের ম্যানেজার মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা আখলাক মিয়ার হিসাবের টাকা আত্মসা‍ৎ করেছেন। আখলাক মিয়ার টাকা ফেরত না দিতে ম্যানেজারের সঙ্গে তাকেও আসামি করে ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর মামলা করে সিটি ব্যাংক।

এ বিষয়ে আখলাক মিয়া বলেন, মাতৃভূমির প্রতি মমতা, বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাণিজ্য করার আশা নিয়েই প্রবাসে কষ্টার্জিত অর্থ সিটি ব্যাংকে জমা রেখেছিলাম। আমার আশার গুড়ে বালি দিয়েছে সিটি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, টাকা ফেরত না দিতেই সিটি ব্যাংক সবকিছু জেনেশুনে আমাকে হয়রানি করছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এ আচরণে আমি বিস্মিত।
 
আদেশে আদালত বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে ম্যানেজার মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া স্বত্বেও আখলাক মিয়াকে মিথ্যাভাবে মামলায় আসামি করা হয়েছে। ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন তার ব্যাংকের আইন বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর দেন। আনোয়ার বলেন, যেকোনো মামলা ব্যাংকের বিরুদ্ধে গেলে সাধারণভাবে আপিল করা হয়। আখলাক মিয়ার মামলার ক্ষেত্রেও তাই হবে।

ব্যাংকের টাকা মারবে কর্মকর্তা আর মামলা হবে গ্রাহকের বিরুদ্ধে। এ ধরনের ঘটনায় ব্যাংকিং ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসা করতে গ্রাহকের সঙ্গে সবসময় ভালো সর্ম্পক রাখাটা উচিত।

আরও পড়ুন:
**সিটি ব্যাংক থেকে এফডিআর’র দেড় কোটি টাকা হাওয়া
**গ্রাহকের টাকা ফেরতে সিটি ব্যাংকের গড়িমসি


বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
এসই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।