ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যাংকিং খাতে দৈন্যদশার মূল কারণ খেলাপি ঋণ!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
ব্যাংকিং খাতে দৈন্যদশার মূল কারণ খেলাপি ঋণ! ‘ট্রেজারি অপারেশনস অব ব্যাংকস ২০১৬’ শীর্ষক কর্মশালা

ঢাকা: ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। ২০১৩ সালে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা বেড়ে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

খেলাপি ঋণের এই নিয়ন্ত্রণহীন বেড়ে চলাকে ব্যাংকিং খাতের জন্য রীতিমতো হুমকি গণ্য করছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং খাতের দৈন্য দশার মূল কারণ হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘ট্রেজারি অপারেশনস অব ব্যাংকস ২০১৬’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত প্রকাশ করেন।

 বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা ব্যাংকগুলোর দেয়া মোট ঋণের ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর গত বছরের মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানেই খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে ১৪ হাজার কোটি টাকা।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম-এর পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব, এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন, দ্য সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মইনুদ্দিনসহ সরকারি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইস্টার্ন ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মেহেদি জামান, ব্যাংক এশিয়ার ট্রেজারি বিভাগের প্রধান আরিকুল আরেফিন প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৬ সালে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। যা আন্তর্জাতিক হিসাবের তুলনায় দ্বিগুণ। পূন:তফসিল নীতিমালায় ছাড় দেয়ার কারণে খেলাপি ঋণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। এছাড়া আরও কিছু কারণে ব্যাংকিং খাতের জন্য খেলাপি ঋণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের দৈন্য দশার মূল কারণ। এ খেলাপি ঋণের কারণেই ব্যাংকঋণের সুদের হার এখনও নাগালের বাইরে। একই সঙ্গে ভাল ঋণগ্রহীতারা বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও অসহযোগিতার শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বোচ্চ তদারকি করতে হবে। এ ব্যাপারে উদ্যমী হতে হবে।

বিআইবিএম-এর মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের সর্বনাশ ডেকে আনছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ না হলে পুরো ব্যাংকিং খাতকেই চরম খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এ ধরনের ঋণের কারণে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাংকগুলো ভাল গ্রাহকদের কাছ থেকে চড়া সুদ নিচ্ছে। তা না হলে ঋণের সুদের হার অনেক কম হতো, সহনীয় পর্যায়ে থাকতো।

এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের আরও সতর্ক হতে হবে। সব ব্যাংকের প্রধানরা যদি ট্রেজারি ব্যপস্থাপনায় বিশেষ নজর না দেন তাহলে বড় ক্ষতির মুখে পড়ার সমূহ আশংকা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে সরকার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলায়। এই প্রবণতা এ খাতের জন্য মঙ্গলজনক নয়। সরকারের উচিত বছরের শুরুতেই এমন একটি নকশা তৈরি করা যে নকশা অনুসরণ করে ব্যাংকগুলো উপকৃত হবে এবং এই খাতে সুদিনের হাওয়া বইতে শুরু করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, মে ১৮,২০১৭
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।