ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এনবিআরের ব্যর্থতায় ভ্যাট আইনের কফিনে পেরেক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১২ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৭
এনবিআরের ব্যর্থতায় ভ্যাট আইনের কফিনে পেরেক

ঢাকা: উচ্চ হারে অর্থ আদায়ের অদূরদর্শী চিন্তা নতুন ভ্যাট আইনের কফিনে পেরেক ঠুকে দিয়েছে বলে মনে করছেন দেশ সেরা অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্বিক প্রস্তুতি ও সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের সঙ্কটকেও ভ্যাট আইন বিড়ম্বনার কারণ হিসেবে অভিহিত করছেন তারা।

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে এনবিআর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে অভিযোগ তুলে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের সিদ্ধান্ত নতুন ভ্যাট আইনকে জন্মের আগেই ভাগাড়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। কেননা সদ্য পাশ হওয়া মেগা বাজেটে এনবিআরের জন্য ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ কিছুতেই বাস্তব সম্মত নয়।

এতে করদাতাদের ওপর বিশাল চাপ পড়বে। আর এনবিআর এরও এতো বিশাল কলেবরের কাজ তোলার মতো লোকবল বা টেকনিক্যাল প্রস্তুতি নেই।  

 
তাই এ আইন বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যেমন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তেমনি বিপাকে পড়েছে খোদ এনবআর-ই।

 
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়া এনবিআর  এর  জন্য লজ্জাজনক। যথাযথ প্রস্তুতি না থাকায় সব কিছু গোলমাল হয়ে গেছে। কেননা, ভ্যাটের নিবন্ধন ও প্রত্যক্ষ আয়করের সংখ্যা না বাড়লে যারা কর দিচ্ছেন তাদের ওপর চাপ বাড়বে।

 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলানউজকে বলেন, এনবিআরের বর্তমান কাঠামো দিয়ে এতোবড় রাজস্ব আহরণ সম্ভব নয়। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনের অন্যতম কারণ এনবিআরের সমন্বয়হীনতা। উপরন্তু, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করা, হাই রেট ভ্যাট তথা ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই এবার আইনটির বাস্তবায়ন স্থগিত করা হয়েছে। সরকারের উচিত এনবিআরকে নতুন করে ঢেলে সাজানো।
 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ভ্যাট থেকে ৯১ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। ভ্যাটের যে হার নির্ধারণ করা হয়েছিলো সেটাও যুক্তি সঙ্গত নয়। সব মিলিয়ে ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়নে সরকার ও এনবিআরের মধ্যে গলদ ছিলো। যার খেসারত এনবিআরকেই দিতে হলো।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকলেও ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে সরকারই লাভবান হতো।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বাংলানউজকে বলেন,  একটি আইন প্রবর্তন করে সেটি বাস্তবায়ন করতে যে প্রস্তুতির প্রয়োজন সেটি ছিলো না এনবিআরের। কিন্তু এনবিআর কেন ব্যর্থ হবে এর একটি পর্যালোচনা হওয়া উচিত। আর ব্যর্থই যদি হবে তাহলে আইনটি কেন প্রবর্তন করতে গিয়েছিলো। সর্বাত্মক চেষ্টা বা প্রয়াস না থাকলে একটি আইন কখনো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ সময় ১০০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৭
এসজে/জেডেএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।