ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কাস্টমসকে ডিঙ্গিয়ে মানি লন্ডারিং তদন্তে সিআইসি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৭ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৭
কাস্টমসকে ডিঙ্গিয়ে মানি লন্ডারিং তদন্তে সিআইসি

ঢাকা: প্রচলিত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কাস্টমসকে বাদ দিয়ে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলকে (সিআইসি) মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের তদন্তকারী সংস্থা’র ক্ষমতা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের কোথাও তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে সিআইসি কাজ করতে পারবে বলে বলা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  ২০১৫ সালে গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়া মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী) এর  ধারা ২(খ)ঠ (অ) অনুসারে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে সম্পৃক্ত অপরাধ তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়। দফা (শ) তে বর্ণিত ২৮টি সম্পৃক্ত অপরাধ যে সংস্থা‘র তদন্তযোগ্য হবে সেই সংস্থা ওই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত মানি লন্ডারিং অপরাধও তদন্ত করবে।

কিন্তু সিআইসি কোনো সতন্ত্র সংস্থা না হওয়ায় আইনে বর্ণিত কোনো অপরাধই সরাসরি তদন্ত করতে পারে না।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে ক্ষমতা পায় কাস্টমস। ইতোমধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কয়েকটি মামলা করেছে এবং সেগুলোর তদন্ত চলছে। কিন্তু এনবিআরের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ১৮ জুন দ্বিতীয় সচিব মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগে চলমান মানি লন্ডারিংয়ের মামলা এনবিআরের অধীনস্থ সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) তে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর এনবিআরের বিশেষ বোর্ড সভায় মানি লন্ডারিং অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে সিআইসিকে মনোনীত করে এনবিআর।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর অন্তর্ভুক্ত এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত। সেখানে এনবিআর নিজস্ব বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের আলোকে কাস্টমসকে বাদ দিয়ে একতরফাভাবে সিআইসি’কে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে মনোনীত করতে পারে না। পাশাপাশি সিআইসি’র মতো একটি ক্ষুদ্র ইউনিট দিয়ে সারাদেশে ক্রমবর্ধমান (কাস্টমস,ভ্যাট  আয়কর) সকল মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ আদৌ তদন্ত করা সম্ভব কিনা বা সেই সামর্থ বা দক্ষতা আছে কিনা তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

ফলে যে উদ্দেশ্যে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে বিভিন্ন সংস্থাকে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেটা ব্যাহত হবে। পাশাপাশি মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই আইনগত দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারে।

উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে মানি লন্ডারিংয়ের অধিকাংশই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে হয়ে থাকে। যা আন্ডার ইনভয়েসিং,ওভার ইনভয়েসিং, চোরাচালান, মুদ্রা পাচার, জালিয়াতি ইত্যাদির মাধ্যমে হয়ে থাকে। ফলে এসব অপরাধ প্রতিরোধে কাস্টমসের কাজ করার সুযোগ সর্বাধিক। সেজন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কাস্টমসকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এজন্য কাস্টমসের সক্ষমতা, দক্ষতা এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য যেখানে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সেখানে কাস্টমকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে কাস্টমস অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এনবিআর নিয়ম ভেঙ্গে নিজস্ব সিদ্ধান্তে সিআইসিকে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব দিতে যাচ্ছে।

কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চাইলেই আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সিআইসিকে ক্ষমতা দিতে পারে না। কেননা সিআইসি হচ্ছে এনবিআরের অধীন একটি বিশেষ টিম যা কাস্টমস,ভ্যাট ও আয়করের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর ফাঁকি বা অনিয়ম প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে কাজ করে থাকে।

এ বিষয়ে জানতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব মো.জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না। আপনার কিছু জানার থাকলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৭
এসজে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।