ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এগুচ্ছে খুলনা-মংলা রেললাইন প্রকল্প

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৭
এগুচ্ছে খুলনা-মংলা রেললাইন প্রকল্প চলছে খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণের কাজ-ছবি-বাংলানিউজ

বটিয়াঘাটা, খুলনা থেকে ফিরে: এগিয়ে চলেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণের কাজ। ৮৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ রেলপথ তৈরি হলে মংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে সমগ্র দেশের রেল-যোগাযোগ। মংলা বন্দরের লাইফলাইন হিসেবে এই রেলপথ যুক্ত করবে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভূটানকেও। ফলে গতি পাবে মংলা বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম। আর শিল্পনগর খুলনা ফিরে পাবে হারানো প্রাণ।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য এ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের কাজ ভালোই এগুচ্ছে। বিশেষ করে খুলনা অংশের কাজ এগিয়েছে অনেকটাই।

কানেক্টিং রোডের কাজও শেষ হয়েছে। মাটি ভরাটের কাজও শেষ পর্যায়ে। ফুলতলা স্টেশনেরও নির্মাণকাজ চলছে।
তিনি আরো জানান, বাগেরহাট অংশের কাজও চলছে। মংলা অংশে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার পথের জমি বুঝে পেয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সে জমিতে মাটি ভরাটের কাজও প্রায় শেষ। অন্যদিকে খুলনায় রূপসা নদীর ওপর নির্মিত রেলওয়ে সেতুর কাজও এগিয়েছে ভালো। বর্ষা মৌসুমের কারণে মাটি ভরাটসহ অন্যসব কাজ ধীরগতিতে চলছে। তবে বর্ষা শেষ হলে দ্রুততালে এগুবে সব কিছু।

এদিকে এ রেললাইনের প্রকল্প পরিচালক মজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বহু কাঙ্ক্ষিত এ রেললাইনের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে রেললাইন স্থাপনের কাজ । রেল লাইন স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি ভরাটের কাজ চলছে পুরোদমে। প্রথম দফায় খুলনার ফুলতলা থেকে বিল ডাকাতিয়ার মাঝ দিয়ে বটিয়াঘাটা পর্যন্ত ভরাটের কাজ চলছে। ধাপে ধাপে মংলা বন্দর পর্যন্ত মাটি ভরাট করা হবে।

চলতি মাসের ২ তারিখে খুলনার বটিয়াঘাটে রূপসা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায় খানজাহান সেতুর ৫ কিলোমিটার ভাটিতে রেলসেতু নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। ঈদের ছুটির পর শ্রমিকরা ফিরে এসেছেন কাজে। তবে রেল লাইনের মাটি ভরাটের অংশে কাজ বন্ধ রয়েছে। মাটি ভরাট অংশের কোনো কোনো অংশের ওপরে জমেছে বৃষ্টির পানি।

চলছে খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণের কাজ-ছবি-বাংলানিউজরেলসেতু তৈরির জন্য নির্মিত বিশাল ইয়ার্ডের ওপর স্থাপন করা হয়েছে একাধিক ক্রেন। একাধিক পাইলিং রিগ বসানো রয়েছে নদীর মধ্যে। বেশ কিছু শ্রমিক ইস্পাতের খাঁচা তৈরি করছেন প্রখর রোদের মধ্যে। যদিও এসব কাজের ছবি তোলার অনুমতি মেলেনি নিরাপত্তা কর্মীদের কাছ থেকে। কথা বলার মতো দায়িত্বশীল কাউকেও পাওয়া যায়নি সাইটে। তবে ইয়ার্ডের বাইরে টাঙ্গানো তথ্যবোর্ডে লেখা আছে মূল সেতু তৈরি করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লারসেন ও টুবরো লিমিটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার আইসি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বিখ্যাত জাপানি প্রতিষ্ঠান সিইজি ও নিপ্পন কোয়ি জেভি। সেতুর প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ৭৬ কোটি টাকা। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৭১৬ দশমিক ৮ মিটার ও ডায়াডাক্টসহ ৫ দশমিক ১৩০ কিলোমিটার এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন সময় ৪২ মাস। অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী তিন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৩০ শতাংশর কাছাকাছি কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ২০১৮ সালের ৩০ জুন এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। গুরুত্বপূর্ণ এ রেলপথ চালু হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সংযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। এতে মংলা বন্দরে গতি আসবে।

খুলনা-মংলা রেললাইন প্রকল্প-ছবি-বাংলানিউজপ্রকল্পসূত্রে জানা গেছে, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পটি মূলত ৩টি অংশে বিভক্ত। একটি রেলসেতু, একটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। এই প্রকল্পের অধীনে লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। রূপসা সেতুর দেড় কিলোমিটার দূরে যুক্ত হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। এ ছাড়া ২১টি ছোটখাটো সেতু ও ১১০টি কালভার্ট নির্মিত হবে। খুলনার ফুলতলা উপজেলা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত ৮টি স্টেশন থাকবে। এগুলো হলো ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মংলা। এই প্রকল্পের অন্যতম কম্পোনেন্ট রূপসা নদীতে রেলসেতু নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে।

প্রকল্পসূত্র জানায়, পাকিস্তান আমলে তৎকালীন সরকার এ রেললাইনটি চালু করার উদ্যোগ নিলেও পরে তা অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার এ রেললাইনটি চালুর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেও এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে দেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী তিনটি দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের কথা চিন্তা করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শুরু করে। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের সংযোগ স্থাপন করতে এ রেললাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৭
আরএম/জেএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।