প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মতামত চাইলে সরকারি ছাপাখানা “দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন(বাংলাদেশ) লিমিটেডের (এসপিসিবিএল)” সার্মথ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে উল্লেখ করে তাতে আপত্তি জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকসূত্র জানায়, সম্প্রতি সরকারি ব্যাংকের চেক ও অন্যান্য মূল্যবান কাগজপত্র সরকার- অনুমোদিত বেসরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে ছাপানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড।
জাপান ও বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের যৌথ উদ্যোগে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের চেক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদসহ বিভিন্ন সামগ্রী ছাপানোর কাজ শুরু করে ওই বছরের মার্চ থেকে।
সরকারি ছাপাখানার সক্ষমতার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়ন ও মালিকানায় দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন(বাংলাদেশ) লিমিটেড(এসপিসিবিএল) প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিরাপদ পণ্য বিভাগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১০ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ৮২ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন পিস চৌম্বক কালি অক্ষর স্বীকৃত (এমআইসিআর) চেক, অচৌম্বকীয় কালি অক্ষর স্বীকৃত (নন-এমআইসিআর) চেক বই, ডিমান্ড ড্রাফট, পে-অর্ডার ছাপা ও সরবরাহ করেছে। আগের অর্থবছরে এসব পণ্যের ছাপার পরিমাণ ছিল ১১৪৫৪ দশমিক ৮০ মিলিয়ন পিস। চলতি অর্থবছরে ছাপানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৮৩১ দশমিক ৪২ মিলিয়ন পিস।
এছাড়াও দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন(বাংলাদেশ)লিমিটেডের ব্যাংক নোট ডিভিশনে ২, ৫, ১০, ২০,৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের কারেন্সি ও ব্যাংক নোট এবং ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড মুদ্রণ করছে। যাত্রা শুরুর পর কারেন্সি উৎপাদন হয়েছিল ২৭১ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন পিস। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৯০২ দশমিক ৫ মিলিয়ন পিস। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০০ মিলিয়ন পিস’র।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত কারেন্সি ও ব্যাংক নোট মুদ্রণের জন্য চারটি অত্যাধুনিক মেশিন আমদানি করেছে। আমদানির প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও চারটি অত্যাধুনিক মেশিন।
দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডে সকল ধরনের সামগ্রী মুদ্রণের আগে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অত্যন্ত মানসম্মতভাবে উৎপাদন করা হয়ে থাকে। যা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলছে, জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড ছাড়াও দেশে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এধরণের ছাপার কাজ করছে। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে এসব পণ্য উৎপাদনের বিশেষ সুযোগ দিলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এধরণের দাবি করতে পারে। যা পুরণ করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় শিল্পনীতিতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত এবং রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি খাতে প্রতিষ্ঠিত একই ধরনের শিল্পের জন্য শুল্ক ও করের ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য থাকবে না। এছাড়াও এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সম আচরণ করতে হবে।
এদিকে জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড বলছে, নিরাপত্তা ও ছাপার গুণগত মানে তারাই বাংলাদেশে আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিলের(আইএমএফ)স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একমাত্র প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান “দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড (এসপিসিবিএল)” দুইবছর আগে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। তখন কয়েকটি সরকারি ব্যাংককে আমাদের কাছ থেকে চেকবই ছাপানোর নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন(বাংলাদেশ)লিমিটেডের চেকবই ছাপানোর মেশিন। তখন সরকারি ব্যাংকগুলোতে চেকবইয়ের সংকট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন এসপিসিবিএলে চেক ছাপানোর যন্ত্র বন্ধ রয়েছে। ব্যাংকের প্রায় ৯৫ শতাংশ নিরাপত্তাসামগ্রী এখান থেকে ছাপানো হয়। এমআইসিআরে ইনকোডেড চেক ছাপানোর অর্ডার দেয়া হলেও দেড় মাসেও তা পাওয়া যায়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যন্ত্রটি মেরামত না হওয়া পর্যন্ত নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চেক ছাপিয়ে নিতে হবে।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কাজ পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করিনি। আমরা বলেছি, অবৈধভাবে কেউ ব্যবসা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। বাংলাদেশ সময়:১৯৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এসই/জেএম