২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে টেন্ডার আহ্বানের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও নরওয়ের সমুদ্রজরিপ জাহাজ প্রস্তুতকারী বেশকিছু কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু জাহাজ জিওলজিক্যাল সার্ভের জন্য এবং কিছু জাহাজ ওশনোগ্রাফি সার্ভের জন্য তৈরি করা হয়। আমরা জাহাজ কিনবো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। আমরা এমন জাহাজই কিনবো যা হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির। ৩০ বছর পরেও যেন তা ব্যবহারযোগ্য থাকে এমন জাহাজই চাই আমরা।
ব্লু-ইকোনমি সেল সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের রয়েল রিসার্চ শিপ ‘ডিসকভারি’ একটি বহুমুখি ব্যবহারযোগ্য (মাল্টিরোল) ওশনোগ্রাফিক জরিপ জাহাজ। যুক্তরাজ্যের প্রধান ইনভাইরনমেন্ট রিসার্চ অরগানাইজেশনের জন্য এ জাহাজটি নির্মাণ করা হয়। ২০১১ এর ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে শেষ হয়। এতে খরচ হয় ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা)। এ রকম একটি জাহাজই চায় বাংলাদেশ।
যুক্তরাজ্যে ৫০ বছর সার্ভিস দিয়েছে এমন একটি জাহাজের পরবর্তী আধুনিক সংস্করণ এই ‘ডিসকভারি’। এ জাহাজটি শুধু জরিপই করবে না, গভীর সমুদ্রে ভূমিকম্প, ভূমিধস, মেরিন ইকোসিস্টেম এবং পরিবেশ বিপর্যয় সম্পর্কেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ হালফিল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করবে। এ জাহাজ বহুমাত্রিক ইকো সাউন্ডার সার্ভে, সমন্বিত ড্যাটা লগিং, মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি সায়েন্স প্রকল্প,সিজমিক সার্ভে, ক্লিন সি ওয়াটার স্যাম্পলিং, আরভিও ভিওএন, সিটিডি সার্ভে এবং ডিপ-ওয়াটার কোরিং এবং ট্রাভিং অ্যাসাইনমেন্ট পরিচালনা করতে সক্ষম।
প্রায় ১শ’ মিটার লম্বা ও ১৮ মিটার প্রস্থ জাহাজটির গড় আয়ু্ষ্কাল ২৫ বছর। জাহাজে মোট ২৪ জন ক্রু সদস্য এবং ২৮ জন বিজ্ঞানীর কাজের ব্যবস্থা রয়েছে। হোটেল, বিনোদন সুবিধা, গ্যালারি,লাউঞ্জ,কনফারেন্স রুম,লাইব্রেরি, ভিডিও রুম, ফিটনেস সেন্টার, হাসপাতাল এবং লন্ড্রিও থাকবে।
কমোডর মামুন জানান, প্রথমে ব্লু-ইকোনমি সেল জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশের (জিএসবি) মাধ্যমে জাহাজটি কেনার চেষ্টা করে। কিন্তু এটির জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব(ডিপিপি)পেশ করার প্রক্রিয়ায় গেলে এবং সেটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে(ইআরডি) উত্থাপন করা হলে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে তা হবে অনেক সময়সাপেক্ষ। এ জাহাজ কিনতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর আওতায় গত ফেব্রয়ারিতে এই মর্মে একটি সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পেট্রোবাংলা বা বাপেক্স সরাসরি অর্থায়নে জাহাজটি কিনতে পারবে। এই আইনের উদ্দেশ্য হলো প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করা। এ অর্থ খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় ভাগ করে দেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে কমোডর মামুন বলেন, জাহাজাট কিনতে বাজেট কোনো বিষয় নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ খাতে ৮শ’ থেকে হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আমাদের খুব দ্রুতই জাহাজটি দরকার। সমুদ্রসীমানা নির্ধারণে ২০১৪ সাল থেকে যদি হিসেব করেন আমরা এরই মধ্যে দুটি বছর পার করে ফেলেছি। জাহাজটি কেনা হলে এটি পুরোপুরি বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী পরিচালনা করবে। সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে পঠন-পাঠন ও গবেষণার জন্য দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ওশনোগ্রাফি নামে বিভাগ চালু হয়েছে। এখান থেকে ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তারাও যোগ দেবেন। জাহাজ কিনতে এরই মধ্যে জার্মানির একটি কোম্পানিকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হয়েছে। এ কোম্পানি আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্য জরিপ জাহাজ কেনার সম্ভাব্য টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি করবে।
কমোডর মামুন বলেন, ১০/১৫ কোটি টাকার নিচে জাহাজের সম্পূর্ণ পরামর্শক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। তবে আমরা এক থেকে দেড় কোটি টাকার মধ্যে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্যেএকটি টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি করিয়ে নিচ্ছি। জাহাজটি হবে দেশের সম্পদ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৭
কেজেড/আরআর/জেএম