বিষয়টি বিবেচনা করার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছেন আমানতকারী তাওহীদুর রহমান ডিয়ার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে করা আবেদনে তিনি বলেছেন, ‘যদি ব্যাংকের গ্রাহক ব্যাংকে আমানত জমা করার পর তা বৃদ্ধি না পেয়ে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়, তবে তা ব্যাংকে অর্থ সঞ্চয়ের যে অভ্যাস, তাতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে’।
‘আপনি নিচের চার্ট লক্ষ্য করুন। ডাচ-বাংলা ব্যাংক সঞ্চয়ী হিসাবের সব আমানতেই ফ্লাট ২.৫ শতাংশ ইন্টারেস্ট দেয়। কিন্তু সার্ভিস চার্জ আলাদা।
এর ফলে এক বিচিত্র চিত্র আমরা পাই-অর্থাৎ, আপনি ডাচ-বাংলা ব্যাংকে যদি
- ৫০০০ টাকা পর্যন্ত জমা রাখেন, তবে টাকা বৃদ্ধি পাবে
- যদি ৫,০০১ থেকে ৮, ১৯৯ টাকা জমা রাখেন, সব ইন্টারেস্ট তো কাটা পড়বেই, আসলও কমে যাবে।
- যদি ৯,২০০ হতে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জমা রাখেন, তবে সুদে-আসলে টাকা বৃদ্ধি পাবে।
- যদি ২৫,০০০ টাকা হতে ২৭, ৬০০ টাকা পর্যন্ত জমা রাখেন, সব ইন্টারেস্ট তো কাটা পড়বেই, আসলও কমে যাবে।
- যদি ২৭,৬০০ টাকার ওপরে রাখেন, তবে আপনি নিরাপদ! টাকা বৃদ্ধি পাবে।
এর চেয়ে অদ্ভুত হিসাব আর কয়টি ব্যাংকে আছে?’
তাওহীদুর রহমান ডিয়ার আবেদনপত্রে আরও বলেন, ‘উল্লেখিত পরিস্থিতিতে আমার প্রস্তাব হল, প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি সার্ভিস চার্জ এমন হবে, যেন সার্ভিস চার্জ ভ্যাটসহ প্রাপ্ত ইন্টারেস্টের এক পঞ্চমাংশ হয়’।
‘পাশাপাশি এ সার্ভিস চার্জে এসএমএস এলার্ট ও অনলাইন ব্যাংকিং (নিজস্ব আইডি পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে ঘরে বসে বিস্তারিত ব্যালেন্স দেখা) অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরি। কতো টাকা ইন ও আউট হল তা তাৎক্ষণিকভাবে জানার জন্য এসএমএস এলার্ট ও বিস্তারিত জানার জন্য অনলাইন ব্যাংকিং’।
এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন ফোন ধরেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গ্রাহকের দিকে নজর নেই। প্রতিনিয়ত তারা আমানতের সুদ হার কমাচ্ছে। বিকল্প বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকায় গ্রাহকরাও বাধ্য হয়ে ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন’।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঋণের মন্দাবস্থার কারণে গত বছর থেকে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ হার কমানো শুরু করেছে। গত মে মাসে আমানতের সুদ হার হয় ৫ দশমিক ২১ শতাংশ এবং ঋণে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মে মাসে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গড় আমানত সুদ হার ছিল ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংকের ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সূত্র আরও জানায়, এসব ব্যাংক আমানতের সুদ হার কমালেও ঋণের সুদ হার না কমানোয় মুনাফার পাল্লা ভারীই রয়েছে। ফলে এসব ব্যাংকের আমানত ও সুদ হারের (স্প্রেড) ব্যবধান ৫ শতাংশের ওপরেই রয়েছে। বার বার নির্দেশনা দেওয়ার পরও ব্যাংকগুলো সুদ হারের ব্যবধান ৫ শতাংশের নিচে নামাচ্ছে না।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, ‘আমানতের সুদ হার কমেছে, ঠিক আছে। কিন্তু গ্রাহক সেবার মানও তো বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটিএম সেবার জন্য দিন-রাত প্রহরী, জেনারেটর, সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণে ব্যয় হচ্ছে গ্রাহকদের জন্যই। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখনো বিভিন্ন মেয়াদের আমানতে সাড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। বিভিন্ন ঋণও দেওয়া হচ্ছে এক অংকের সুদে। বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে ব্যাংকে টাকা রাখলে মুনাফার বদলে উল্টো চার্জ আদায় করা হয়’।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৭
এসই/এএসআর