আসছে ঈদেও আবারও দাম কমানোর চিন্তাভাবনা করছেন চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছরের মতো এবারও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম পড়ে যাওয়াকেই দায়ী করছেন তারা।
বাংলাদেশের কাঁচা চামড়া শিল্পকে ঘন জনবসতিপ্রধান এলাকা হাজারিবাগ থেকে স্বল্পবসতি এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তাদের সর্বশেষ শর্ত ছিল, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হাজারিবাগ এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে পরিবেশবান্ধব চামড়া উৎপাদন করতে না পারলে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এরপর কয়েক দফা সময় বাড়ালেও হাজারিবাগ থেকে চামড়া শিল্প সাভারে সম্পূর্ণরূপে স্থানান্তর সম্ভব হয়নি। যেকারণে বেশ কিছু দেশ চামড়া রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বাংলানিউজকে জানান, তিন মাস আগে হাজারিবাগে ট্যানারিতে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওদের পরিবেশ ছাড়পত্র আগেও ছিলো না। কোর্টের নির্দেশে আমরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। সাভারে স্থানান্তরিত হলে পরিদর্শন করে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৩ সালের পর থেকেই কাঁচা চামড়ার দাম কমতে শুরু করেছে। ২০১৩ সালে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ছিলো ৮৫-৯০ টাকা। এরপর ২০১৪ সালে তা কমিয়ে করা হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। অব্যাহতভাবে দাম কমে ২০১৫ সালে দাঁড়ায় ৫০-৫৫ টাকা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ছিলো ৫০ টাকা।
আসছে ঈদুল আযহায় আরেক দফা দাম কমানোর চিন্তাভাবনা করছেন ব্যবসায়ীরা। যুক্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারের পড়তি দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বশেষ জুন মাসে প্রতি পাউন্ড গরুর চামড়ার দাম দেখানো হয়েছে দাম ৬৭ দশমিক ৫৯ সেন্ট। ‘ইনডেক্সমুডি’ নামক একটি ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারদর দেখা যায়।
আসছে ঈদে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়ার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে মোবাইল ফোনে জানান, ‘এবার চামড়ার দাম বেশ কমবে। ’
তবে কত কমবে তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
আগামী ১২ আগস্ট ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করতে বৈঠকে বসবেন চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এরপর তারা একটি দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জানাবেন। তারপরই ঈদুল আযহার কোরবানী পশুর কাঁচা চামড়ার দাম ঘোষণা করা হবে।
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন জানান, ‘আমাদের গত বছরের ঈদের চামড়া এবং ঈদ পরবর্তী যে চামড়া মজুদ করা হয়েছিল। তারই ৩৫ ভাগ এখনও রয়ে গেছে। তাই দাম কমছে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম কম।
রুমা ট্যানারির মালিক ও বিএফএলএলএফই’র সাবেক সভাপতি আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, ‘অর্ধেক ট্যানারিও সাভারে স্থানান্তর হতে পারেনি। তাছাড়া ব্যাংক লোন না পাওয়ায় অনেকেই চামড়া কিনতে পারবেন না। যেকারণে এবার চামড়ার দাম কমার সম্ভাবনাই বেশি।
প্রতিবছর পশুর চামড়ার দাম কমলেও বাড়ছে পশুর দাম। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের খুচরা বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মে মাসে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৩৫০ টাকা। এক বছর পর তা বাড়িয়ে অর্থাৎ ২০১৬ সালের মে মাসে তা দাঁড়ায় ৩৮০ টাকা কেজি। সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী বুধবার (০২ আগস্ট) প্রতি কেজি গরুর মাংসের খুচরা দাম নির্ধারণ করা আছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা। যা ২০১৬ সালের এই সময় ছিলো ৪১০-৪৩০ টাকা কেজি।
এই পরিসংখ্যানেই বোঝা যাচ্ছে প্রতি বছরই গরুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭
এসএম/জেএম