বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নানা মতপার্থক্য ও প্রতিবন্ধকতা থাকলেও বাংলাদেশ এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। জিএসপি সুবিধা না পেলেও বর্তমানে দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছয় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) ঢাকার হোটেল ওয়েস্টিনে আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স (অ্যামচ্যাম) আয়োজিত রিফ্লেকশনস অন দি ইউএস-বাংলাদেশ রিলেশনশিপ শীর্ষক লান্স মিটিংয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অফ অনার ও স্পিকার হিসেবে উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন মার্কিন সরকারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরামর্শক ফ্রাং জি. উইসনার।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা না পেলেও বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বেড়েছে অনেক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতে কোনো জিএসপি সুবিধা প্রদান করতো না। ২০১৩ সালের হিসাব মতে তামাক, প্লাস্টিক, সিরামিক ও টেবিলওয়্যারের মতো কয়েকটি পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে মাত্র ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধু এগুলোর ওপরই বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পেতো।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জিএসপি সুবিধার বাইরে বর্তমানে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রায় ৬ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। সিঙ্গেল কান্ট্রি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় রপ্তানি বাজার।
মন্ত্রী বলেন, জিএসপি সুবিধা স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৬টি শর্ত প্রদান করে। বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ে সেসব শর্ত পূরণ করে, এরপরও জিএসপি সুবিধার স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্ত এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। তাই বাংলাদেশ এখন আর জিএসপি সুবিধার দাবী করছে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডব্লিউটিও-এর প্রথম মিনিস্ট্রিরিয়াল কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উন্নত বিশ্ব এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে ডিউটি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি সুবিধা প্রদান করার কথা। বেশিরভাগ উন্নতদেশ এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে এ বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করলেও বেশ কিছু উন্নত দেশ তা দিচ্ছে না। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম বাণিজ্যিক অংশিদার।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। বাংলাদেশের বড় রপ্তানি বাজার এবং বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গত বছর নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিও-এর মিনিস্ট্রিরিয়াল কনফারেন্সে উন্নত বিশ্বে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য ঔষধ রপ্তানির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল বা ট্রিপ চুক্তির মেয়াদ ১৭ বছর বৃদ্ধির প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করেছিল। বাংলাদেশ চায় সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যেতে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সফলভাবে এমডিজি অর্জন করে জাতিসংঘে পুরষ্কৃত হয়েছে। এসডিজি অর্জনে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। যথাসময়েই বাংলাদেশ এসডিজি অর্জন করবে। এক সময় যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি ও দরিদ্র দেশের মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন, আজ তারাই বাংলাদেশকে উন্নয়নের বিস্ময় বলছেন। বিশ্ব ব্যাংকসহ সকল অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন।
আমেরিকা-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স (অ্যামচ্যাম)-এর প্রেসিডেন্ট মো. নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটও বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৭
আরএম/এএটি/এমএইউ/