চেকবইয়ের ব্যবহার হয় ব্যাংকে জমানো টাকা তোলার জন্য। সরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস ছাড়াও দেশে কার্যরত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এসব চেকবই ছাপানোর কাজ করছে কয়েকটি বেসরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস।
জালিয়াতি রোধে অননুমোদিত প্রেসে চেক না ছাপানোর আবেদন করেছেন ইয়াসির আরাফাত ভুঁইয়া নামের এক ব্যক্তি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে চেক জালিয়াতির ঘটনা হঠাৎ বেড়ে গেছে। চলতি বছর প্রায় প্রতিমাসেই গড়ে ২০টি চেক জালিয়াতির অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে (সিআইপিসি) জমা পড়েছে। একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র অহরহই এ চেক জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের হিসাব থেকে লাখ লাখ টাকা তুলে নিচ্ছে।
ইয়সির আরাফাত ভুঁইয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপকের কাছে দেওয়া আবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশে কার্যরত সকল ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেসব সিকিউরিটি পণ্য ব্যবহার করে থাকে সেগুলোর তদারক পর্যবেক্ষণ ও দেখভালের দায়িত্ব আপনার।
একথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বছরে যে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক নিরাপত্তা পণ্যের কাজ (ছাপানোর কাজ)করা হয় তার সিংহভাগই করে থাকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। এই মুহূর্তে এই খাতের মোট চাহিদার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ উৎপাদন করে থাকে সরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস। বাকিটা উৎপাদন করে থাকে বিদেশি ও অননুমোদিত কোম্পানিগুলো।
সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের নিরাপত্তা কাগজ (চেকবই সেসবের একটি) তৈরি করছে অননুমোদিত সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে। যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দারুণভাবে ব্যাহত করছে। এটা আর্থিক খাতের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
আবেদনে তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন করতে হলে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন রপ্তানির নতুন নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার করা ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে আরও বিকল্প পণ্য খুজে বের করা। এছাড়াও নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসায় বিদেশিদের উপর নির্ভরতা কমাতে সরকার স্থানীয় কোম্পানিকে এসব কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাংক অনুনোমদিত বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এসব নিরাপত্তা কাগজপত্র ছাপানোর কাজ করছে। যা বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে।
এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া এধরনের চেকবই ও ব্যাংকের স্পর্শকাতর কাগজপত্র ছাপানোর কাজ কেউই করতে পারে না। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়াই কিছু কোম্পানিকে এসব কাজ দেওয়া হয়েছে।
এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি, জালিয়াতি রোধে অনুমোদিত দেশীয় কোম্পানিতে এসব পণ্য ছাপানোর ব্যবস্থা করে দেশের অর্থ দেশে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
জালিয়াতচক্র গ্রাহকদের চেকবইয়ের পাতা হুবহু নকল কীভাবে করে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের তদন্তে চেক জালিয়াতির সাথে চেক প্রস্তুতকারী কিছু কোম্পানির লোকজন জড়িত থাকতে পারে বলে মনে হয়েছে। আর এ কাজে সহযোগিতা করছেন ব্যাংকেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা। বিভিন্ন সময়ে তদন্তে এর সত্যতাও মিলছে।
বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে চেক জালিয়াতি ইস্যুতে গ্রাহককে সুরক্ষা দিতে ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বীকার করে বলেছে, চেক জাল করে গ্রাহকের হিসাব থেকে অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি বা প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। ব্যাংকের কিছু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এছাড়া চেকবইয়ের পাতা বা চেকবই চুরি, চেক জালিয়াতি বা সিস্টেমের ত্রুটিজনিত কারণে এবং আইটি সিস্টেম অপব্যবহারের মাধ্যমেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমআইসিআর চেক ছাপানোর কাজ করছে ছয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের (আরজেএসসি) অনুমোদিত একমাত্র দেশীয় প্রতিষ্ঠান জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড। বাকি ৫টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদ নেই। অবৈধভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, সরকারি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক তালিকাভূক্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চেক বই ও অন্যান্য কাগজপত্র ছাপিয়ে থাকে। অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৭
এসই/জেএম