বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) ঢাকার কুড়িলে অবস্থিত ‘ইণ্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা’র (আইসিসিবি) ৫ নম্বর অডিটোরিয়ামে ‘১৮তম টেক্সটেক বাংলাদেশ ২০১৭’ উপলক্ষে আয়োজক প্রতিষ্ঠান সেমস গ্লোবাল ও বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘কেমিক্যাল সেফটি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট: বাংলাদেশ পার্স্পেক্টিভ’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এ আশ্বাস ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সায়েদা সুলতানা রাজিয়া এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফেকচার অ্যান্ড এক্সপোর্ট এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান।
এছাড়া ‘রেসপনসিবল কেয়ার ইন কেমিক্যাল সেক্টর’ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল এসোসিয়েশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল বাসার মিয়া, ‘প্রস্পেক্ট এন্ড চ্যালেঞ্জেস অব বেসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে এসিআই ফরমুলেশন বাংলাদেশের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জি. মো. সুলতান সালাউদ্দীন, ‘হেলথ ইফেক্টস অব হ্যাজার্ডাস কেমিক্যাল’ বিষয়ে বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত খান, ‘জেডডিএইচসি: ফিউচার অব ইনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি বিজনেস’ বিষয়ে বুয়েটের একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মহিদুস সাদমান খান ও ‘প্রসপেক্ট অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব জেডডিএইচসি ড্রাইভেন বিজনেস ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে সিল্কফ্লেক্স কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের প্রধান আহমেদ জাভেদ জামাল বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বক্তারা গার্মেন্টস সেক্টরসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের কারণে পরিবেশ দূষণের হার, ক্ষয়ক্ষতি ও তা মোকাবেলায় সকলের করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
বক্তারা বলেন, “বিশ্বে পোশাক শিল্পখাতে আমরা ২য় অবস্থানে আছি। চীনের পরই আমাদের এ অবস্থানের উন্নতি ঘটানোর সাথে আমাদের লক্ষ্য আমরা পরিবেশ দূষণের হারও একেবারে কমিয়ে আনবো। আগে বাংলাদেশের কল-কারখানাগুলোতে পরিবেশ উপযোগী ‘ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ (ইটিপি) চালু ছিল না। বর্তমানে প্রত্যেকটি কল-কারখানাতে ইটিপি প্লান্ট বাধ্যতামূলক এবং প্রায় সবগুলোতেই আছে। এর মাধ্যমে আমাদের জলাশয়গুলোর প্রাণ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া এই প্লান্টের মাধ্যমে কল-কারখানাগুলোতেও অতিরিক্ত পানির চাহিদা সহজেই মেটানো সম্ভব হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকছে। ”
“আমাদের দেশে প্রতিদিন গার্মেন্টসসহ অন্যান্য কল-কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। যে কারণে কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাপ বাড়ছে এবং পরিবেশ দূষণ ঠেকানোর চ্যালেঞ্জটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত ক্লোরাল এলকালি প্ল্যান্ট ও ক্লোরিনেটেড পণ্য এবং হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড প্ল্যান্ট তৈরি পোশাক শিল্পখাতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ। আর এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজ করাটাও ব্যাপক পরিমাণ ঝুঁকিপূর্ণ। ”
বক্তারা আরও বলেন, “মানুষের শরীরে রাসায়নিক দ্রব্যগুলোর কার্যক্রম ভিন্ন ভিন্ন হয়। এক এক জনের শরীরে বয়স, লিঙ্গ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার মান,হরমোনের কার্যক্ষমতা ও কেমিক্যালের ক্রিয়ার হারের উপর নির্ভর করে প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হয়।
রাসায়নিক দ্রব্যগুলো সরাসরি মানুষের কোষের ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিডে (ডিএনএ) আক্রমণ করে ফলে রোগ মারত্মক রূপ ধারণ করে। ”
জেডডিএইচসি সম্পর্কে বক্তারা বলেন, জেডডিএইচসি সম্পর্কে বাংলাদেশের বেশিরভাগ গার্মেন্টসে দক্ষ লোক নেই এবং তাদের ট্রেনিং করা নেই। জেডডিএইচসির লক্ষ্য হচ্ছে সচেতনতা ও কেমিক্যাল সম্পর্কীয় জ্ঞান বৃদ্ধি, রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার প্রক্রিয়া, খরচ কমানো ও বিকল্প রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার সম্পর্কে জানা। জেডডিএইচসি প্রজেক্টের সফলতা আসলেই পরিবেশ দূষণের প্রতিরোধে আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
সেমিনার শেষে দর্শকদের সুবিধার্থে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিভিন্ন কল-কারখানার মালিক ও কর্মকর্তারা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
এমএএম/আরআই