ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

একেক বাজারে একেক দর

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
একেক বাজারে একেক দর আজমপুর কাঁচাবাজার/ ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনে সিটি কর্পোরেশন বা রাজউকের কোনো বৈধ বা স্থায়ী কাঁচাবাজার নেই। তাই বলে বাজার নেই তা বলা যাবে না। ছোট বড় মিলিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও আবাসিক প্লটে বাজার আছে কম করে হলেও ছয়টি। তবে এক বাজারের পণ্যের দরের সঙ্গেও মিল নেই অপর বাজারের। তুঘলকি কায়দায় একেক বাজারে একই পণ্য বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে।

উত্তরার সবচেয়ে বড় বাজার আজমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাজউকের কমার্শিয়াল প্লটের ওপর অস্থায়ীভাবে নির্মিত। অপেক্ষাকৃত বড় এ বাজারে মেলে সব ধরনের মাছ, মাংস, সবজি, মুদি পণ্য।

অন্যদিকে ১৪ নম্বর সেক্টরের বেগম জোহরা মার্কেট এবং এই সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়ক সংলগ্ন বাজার সে তুলনায় ছোট। অন্যদিকে ১১, ১২ ও ১৩ নং সেক্টরের বাজারগুলো বাণিজ্যিক প্লটে গড়ে ওঠা, আকারে কম বড় নয়।

শুক্রবার (১১ আগস্ট) সকাল থেকে উত্তরার ৬টি বাজার ঘুরে মিলেছে একই চিত্র। তবে তা একই দরে নয়, ভিন্ন ভিন্ন দরে একই পণ্য বিক্রি হওয়ার চিত্র। আবার পাইকারি দরের সঙ্গেও তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

এক কেজি ওজনের ইলিশ আজমপুরে ১২শ’, ১১ নং সেক্টর বাজারে ১১শ’, জহুরা মার্কেটে ১৪শ’, ১২ নং সেক্টর বাজারে ১১শ’ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নদীর চিংড়ি আজমপুরে কাঁঠালী ১ হাজার, ডিমা ৮০০, মাঝারি ৭৫০ ও ছোট চিংড়ি ৭০০ টাকা দরে। অন্য বাজারে এই মাছগুলোর দামের পর্থক্য ৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রেও মাছ ভেদে ব্যবধান ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

আজমপুর বাজারে গরুর মাংস ৫শ’ থেকে ৫২০ টাকা, খাসি৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, বকরি ৬০০ থেকে ৬৫০, ও ভেড়া ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও অন্য বাজার গুলোতে গরু ৫০০ ও ছাগল ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই চিত্র মিলেছে ডিম ও মুরগির ক্ষেত্রে দেশি মোরগ ও মুরগি ১১ নং সেক্টরে ৩০০ টাকা দরে কেজি বিক্রি হলেও আজমপুরে তা বিকোচ্ছে ৩৬০ টাকা। আবার জহুরা মার্কেট ও ১২ নং সেক্টরেই এর দাম নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। ডিমের ক্ষেত্রে আজমপুরে ফার্ম ১০০ টাকা ও দেশি ১৪০ টাকা ডজন হলেও অন্য বাজারগুলোতে ফার্মের ডিম ৯০ থেকে ৯৫ টাকা এবং দেশি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা,  হাঁস ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সব্জির বাজারে দরের পার্থক্য চোখ কপালে তোলার মতোই। আজমপুরে পটল ৫০ টাকা, ১১ নং সেক্টর ও জহুরা মার্কেটে তা ৬০ টাকা কেজি। কাঁচা পেঁপের দর বাজার ভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কাঁকরোল ৪০ থেকে ৮০ টাকা,  করলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কচুরমুখি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সিম ১২০ থেকে ১৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ফুলকপি ও বাধাকপি ৩৫ থেকে ৫০ টাকা প্রতি পিস, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, শশা ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আজমপুর কাঁচাবাজার/ ছবি: কাশেম হারুনআজমপুর বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৬০ টাকা বিক্রি হলেও অন্যবাজার গুলোতে দর কম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। অন্যদিকে দেশি রসুনের দর বড় ১৬০, ছোট ১৪০, চায়না ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি বিক্রি হলেও জহুরা মার্কেটে দেশি রসুন ১২০ ও চায়না ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদার দাম ১৩০ টাকা, ইন্ডিয়ান ১২০ টাকা ও চায়না আদার দাম রয়েছে ১৬০ টাকা। উত্তরার অন্যবাজার গুলোতে দরের পার্থক্য আজমপুরের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কম। পর্থক্য আছে শুকনো মরিচের দরেও।  আজমপুর বাজারে থাকা মোটা ও ঝাল কম লাল মরিচের দাম ২০০, দেশি ঝাল ও লাল চিকন মরিচ ১৮০ ও ইন্ডিয়ান ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য বাজার গুলোর সঙ্গে এর পার্থক্য কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

চালের বাজারে মোটা চাল বাজার ভেদে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, মিনিকেট ৫৪ টাকা থেক ৫৭ টাকা, নাজিরশাল ৫৩ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা ও প্যাকেট ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা। রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতল ৫২০ টাকা, ফ্রেস ৫০০ টাকা ও তীর ৫১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ১০০ টাকা লিটার দরে।

বাজারের দরের এই ফারাকের সঙ্গে নেই পাইকারি বাজারের কোনো সামঞ্জস্যতা। মৌলভীবাজার পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী গোলাম মওলা এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ৪৯ টাকার চিনি খুচরা ব্যবসায়ীরা ৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন, ৫০ টাকার পেঁয়াজ ৭০ টাকা, ৮০ টাকার তেল ১১০ টাকা, ৮০ টাকার দেশি মশুর ডাল ১২০ টাকা। প্রতিটি পণ্যের দরই খুচরা পর্যায়ে প্রায় ২০ টাকা বেশি। এজন্য সরকারের যে কঠোর মনিটরিং দরকার তা নেই। এই সুযোগে যে যেভাবে পারছে পাবলিকের পকেট কাটছে। এজন্যই একই এলাকার ৫ বাজারে ৫ রকম দর।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার সুযোগ নিচ্ছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। গ্রামে এই সমস্যা নেই। সেখানে সবখানে একদর। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এটা মগের মুল্লুক না যে কেজিতে ২০ টাকা ৫০ টাকা লাভ করতে দেওয়া হবে। নিত্যপণ্য খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৫ টাকা করতে পারে ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
আরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।