ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘সাধের লাউ’ সাধ্যের বাইরে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
‘সাধের লাউ’ সাধ্যের বাইরে! সাধের লাউ এখন আর নেই সাধ্যের মধ্যে; ছবি: দীপু মালাকার

শ্যামবাজার ঘুরে: একে তো অঝোর ধারায় বৃষ্টি, তার ওপর ব্যাপারি ও শ্রমিকদের হুড়োহুড়ি। আনিসুর রহমান কোনোভাবেই স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। ছাতাটাও ভাঙ্গা। বেশ কয়েকটা ফুটোও স্পষ্ট দেখা গেল। হাতে বাজারের থলে নিয়ে এ-দোকান থেকে ও-দোকান করছেন।

দাঁড়ানোমাত্র মাথায় সব্জির বোঝা নিয়ে ধাক্কা লাগাল একজন কুলি। গা বাঁচানোর উপায় নেই তার।

হচ্ছেও তাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিজে জুবজুবে একেবারে জবুথবু অবস্থা তার। তখনো বাজারের থলেটা তার শূন্যই রয়ে গেছে।

পায়ের নিচে থিকথিকে ঘিনঘিনে কাদা-পানি, বৃষ্টির ছাঁট, ভিড় আর কুলিদের ঠেলা সয়ে অনেকক্ষণ এসে দাঁড়ালেন সোলাইমানের সব্জির দোকানে। উদ্দেশ্য, ভালো দেখে একটা লাউ কিনবেন। পাইকারি বাজার বলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পয়সা বাঁচিয়ে শ্যামবাজার থেকেই সদাই করেন। থাকেন বাবুবাজারে। সেখানেই একটি দোকানে কাজ করেন আনিসুর রহমান।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দু’টো লাউয়ের দাম জানতে চাইলেন। বিক্রেতা সোলাইমান বললেন, একদাম ১২০ টাকা। দাম শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। জানালেন, ১০০ টাকায় হলে নিতে পারবেন। কিন্তু বিক্রেতা সোলাইমান অনড়। তার এখানে সবই ‘এককথা, এক দর’। অগ্যতা না কিনেই ফিরে যেতে হলো তাকে। ‘সাধের লাউ’ কেনা তার সাধ্যে কুলাল না। কারণ তিনি স্বল্প আয়ের মানুষ। কায়ক্লেশের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

সাধের লাউ এখন আর নেই সাধ্যের মধ্যে; ছবি: দীপু মালাকারবিক্রেতা সোলাইমান জানালেন, ময়মনসিংহ থেকে লাউ এনে প্রতিদিন শ্যামবাজারেই তিনি বিক্রি করেন তিনি। পাইকারী দর ৬০ টাকা। কোনো কোনো দিন কমও যায়। তবে তার ভাষায় এখন ‘আমদানি কম’(যোগান কম) বলে ৬০ টাকার কমে দিতে পারছেন না। খুচরা বাজারে এই লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।

আবুল হোসেন মুন্সিগঞ্জ থেকে লাউ এনেছেন ১’শটি। সকাল ৯টা নাগাদ বিক্রিও হয়েছে ৪০টির মতো। সাইজ অনুসারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম হাঁকছেন তিনি। তার দোকানে এসেও আনিসুর রহমানকে ফিরে যেতে হলো।

আনিসুরের মতো আরো বেশ কয়েকজন সাধারণ নিন্মবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতাকে ফিরে যেতে দেখা গেল। এদের অনেককেই দেখা গেল লাউ কেনার পরিবর্তে কুমড়া কিনে নিলেন। কুমড়ার দাম কিছুটা কম। ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় রফা হচ্ছে।

রমজান আলী নামের এক ক্রেতা বললেন, সাধের লাউ কিনুম ক্যামতে! দাম তো ম্যালা বেশি। তাই কুমড়াই ভি কিনলাম।

সারাদেশে বৃষ্টির বাগড়ায় সব্জির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই পাইকারী বাজার ঘুরেও স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারছেন না নিন্মবিত্ত মানুষ। দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতির মূর্ত প্রতীক যেন কাঁচাবাজারও। ফলে লাউ, শিম, বেগুন থেকে শুরু করে সব সব্জির দামই চড়া। ব্যাপারিরা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে দাম আরো বাড়বে।

আর বৃষ্টি-বাদলা এভাবে চলতে থাকলে সেটাই হবে। আর তাতে নিম্নবিত্ত, গরিব মানুষের জন্য তা হবে বড় দুশ্চিন্তা। তাদের বাজার খরচে টান পড়বে। একেই বলে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা!’
বাংলাদেশ সময়:১৩৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
ইইউডি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।