তারপরও সবকিছু মিলে যেন পানের কদর কমছেই না। চাহিদা বাড়তে থাকায় এই খাতে দিনে দিনে বাড়ছে বিনিয়োগ ও শ্রম।
জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে চলা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দুপাশে ইচলাদি, বাটাজোর, চাদশি, শোলক, রাজিহার, টরকীসহ ৬/৭ টি স্থানে হাট বসে। যার ফলে সপ্তাহ জুড়েই কোনো না কোনো জায়গায় হাট মিলছে। আর হাটগুলো থাকছে স্থানীয় বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর উপজেলার চাষিদের পানের দখলে।
তবে এরমধ্যে ৮ দশক ধরে চলা বাটাজোরের পানের বাজার সবথেকে বড়ো। যার প্রতি হাটে ন্যূনতম ২০ লাখ টাকার পান আসে।
হাটে চাষিরা পান নিয়ে আসার পর আকার ও মান দেখে এর দর ঠিক করেন পাইকাররা। এরপরে ১ বিড়া করে পানের আটি বাধা হয়। এরপর কলাপাতার তৈরি অস্থায়ী ঝুড়িতে কখনও ১শ’ আবার কখনও ৫শ’ বিড়া একসঙ্গে বাধা হয়। পরে তা ঢাকা থেকে শুরু করে সিলেট, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্খানে পাঠানো হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নির্মল বিশ্বাস বলেন, বরিশালের পান চাষ ও বাজার প্রসারিত হচ্ছে। শুধু গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলার কিছু গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ লোক পান চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
তিনি বলেন, এরমধ্যেও ভারতীয় পানের আমদানি হলে দর পড়ে যায় এবং ক্ষতির সম্মুখীন হন চাষিরা। এতে কোনো কোনো দিন চাষির বিড়া উৎপাদনে ৩০ টাকা খরচ হলেও তিনি পান ২০ টাকা।
পান ব্যবসায়ী মোস্তফা হাওলাদার জানান, বর্তমানে আকার ও ভালো-খারাপ দেখে পানের বিড়া প্রতি দর ২৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। তবে কখনও কোনো কোনো পান বিড়া প্রতি দাম ৫/৭ টাকাও দাম ওঠে।
তিনি বলেন, এই অঞ্চলে পান চাষের মজা হচ্ছে বরজ একবার করে যুগ পার করা যায়, কোনো রোগবালাই নাই, নতুন করে জমি চাষ, আবাদের প্রয়োজন হয় না। অল্প পরিশ্রম ও জনবল দিয়ে পানের বরজ করা সম্ভব, পাশাপাশি এ অঞ্চলে পানিও আটকে থাকে না।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, উৎপাদন যখন বেশি হয় তখন দর একটু কমে যায়, এটা স্বাভাবিক। তারপরও আমি বলবো আমাদের এ অঞ্চলের চাষিরা লাভবান। কারণ দিন দিন পানের বরজের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর ৫ থেকে ৭ হেক্টর জমি পানের বরজের আওতায় আসছে।
চাষিদের অভিযোগ থাকতে পারে, আবার অবাধ বাণিজ্যে যেকোন দেশের পান আসতে পারে। তবে আমরা চাচ্ছি কোয়ালিটি সম্পন্ন পান উৎপাদন করতে যাতে চলমান বাজারে এ অঞ্চলের পান সবসময় জয়লাভ করতে পারে।
বরিশালে গত বছর ২ হাজার ২ শ’ ৫৩ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। যারমধ্যে গৌরনদী উপজেলায় সর্বোচ্চ ৮ শ‘ ৫০ হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এমএস/আরআর