পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব অনলাইন-লেনদেন কিংবা কার্ডের বৈধতা থাকলেও বাংলাদেশে কোনো ব্যাংকের সঙ্গে এসবের সংশ্লিষ্টতা নেই। ফলে প্রতিনিয়ত কি পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যও জানা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
মঙ্গলবার (০৮ আগস্ট) অর্থ পাচারে সহায়তাকারী একটি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুধুমাত্র এই চক্রটির মাধ্যমেই ‘কোটি কোটি টাকা’ পাচারের প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
সিআইডি জানায়, অনলাইনভিত্তিক মাস্টার কার্ড পেওনার (payoneer) এবং অনলাইনে অর্থ লেনদেনের মাধ্যম Skrill, payoneer, neteller. Firstchoice. Paypal, payza, perfect money, web money, bitcoin সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হচ্ছে।
সিআইডির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ব্যক্তিপর্যায়ে ফ্রিল্যান্সিংসহ বিভিন্নভাবে বিদেশ থেকে যেসব অর্থ আয় করা হচ্ছে, সেই অর্থ নির্দিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ‘ইলেক্ট্রিক মানি’ হিসেবে জমা হচ্ছে। ওই ব্যক্তিরা তাদের উপার্জিত ডলার সাধারণত কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিময় করেন না। কারণ প্রতিবার বিনিময়ের সময় ব্যাংক নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সার্ভিস চার্জ হিসেবে কেটে রাখে। তখন তারা ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যালেন্সগুলো ট্রান্সফার করে ব্যাংকের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিনিময় করে নেয়।
এই ‘ইলেক্ট্রিক মানি’ একটি সংঘবদ্ধ চক্র টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করতে থাকে। তখন পাচারকারীরা সেই চক্রের কাছ থেকে হাজার হাজার ডলার ‘ইলেক্ট্রিক মানি’ কিনে নিজেদের পেওনার ক্রেডিট কার্ড কিংবা অনলাইন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়। এরপর সেসব ‘ইলেক্ট্রিক মানি’ বিভিন্ন দেশে গিয়ে অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারছেন পাচারকারীরা। এভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কারো পক্ষে লিকুইড মানি (নগদ অর্থ) নিয়ে বিদেশে যাওয়া সম্ভব না। তাই কারো যদি কালো টাকা থাকে সেই টাকা তিনি চাইলে অনায়াসেই একটি কার্ডে কিংবা ওয়েবসাইটের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাচার করে দিতে পারছেন। এটা আমাদের দেশে পুরোপুরি এক নতুন ধরনের ক্রাইম। এর বিরুদ্ধে এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নিলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়বে।
এই অভিনব পন্থায় অর্থ পাচারে সহায়তাকারী চক্রের গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে ইরমান (২২), আসকার ইবনে ইসহাক শাকিল(২৪), সৈয়দ মেহেদী হাসান(২৯), হায়দার হোসেন(৩০) ও জহিরুল হক(২৫)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৪১টি পেওনার মাস্টার্ড কার্ড, নগদ ৯ লাখ ২১ হাজার ৫০০ টাকাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
এ চক্রের বিষয়ে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ‘পেওনার মাস্টারকার্ড’ (payoneer) পেতে অনলাইনে আবেদন করতো চক্রটি। নির্দিষ্ট সময় পর বিদেশ থেকে সেসব কার্ড উল্লেখিত ঠিকানায় ডাকযোগে পাঠানো হতো। যেহেতু ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করা হয় সেহেতু ডাক বিভাগের কিছু ব্যক্তির যোগসাজেসে কার্ডগুলো সংগ্রহ করতো তারা। তারপর যে কোনো ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি কার্ড ২৫ ডলারের বিনিময়ে সরবরাহ করতো। বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে আসা ‘ইলেক্ট্রিক মানি’ সরবরাহ করে পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে অর্থ পাচারের সুযোগ করে দিতো চক্রটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
পিএম/জেএম