সে ধান শুধু গোলায় ভরার দিনক্ষণ গুনছিলেন কৃষক। কিন্তু কৃষকের সেই স্বপ্ন অনেকটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় জমির উঠতি ফসল মাটিতে লুটে পড়ায়।
কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতির পরিমাণ নগণ্য। যা ক্ষতির মধ্যে পড়ে না বললেই চলে। তবে কৃষি বিভাগের হিসেব মানতে নারাজ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তাদের ভাষায়, ‘সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বৃষ্টিপাত আর ঝড়ো বাতাসে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে’।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত ও দমকা থেকে ঝড়ো বাতাসে বগুড়ার ১২টি উপজেলায় কমবেশি চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধান ক্ষেতের চিত্রটা এরকম। এসব উপজেলার কৃষক ও কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষেতের পর ক্ষেতের ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেতের উঠতি ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে। অথচ গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পর্যন্ত এসব ক্ষেতের চিত্রটা ছিলো ভিন্ন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছিলো সবুজের সমারোহ। যা নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কৃষকরা।
কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত পেরোনোর পরই কৃষকের সেই স্বপ্ন যেন অনেকটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ভোর থেকেই শুরু হলো অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত। সঙ্গে বইতে থাকে দমকা থেকে ঝড়ো বাতাস। চলতে থাকে রোববার (২২ অক্টোবর) মধ্যরাত পর্যন্ত।
ঝড়ো বাতাসে চোখের সামনেই ক্ষেতের ফসল মাটিতে লুটে পড়তে দেখেন কৃষকরা। মাঠের পর মাঠ ধানের ক্ষেত নিমজ্জিত হয়ে পড়ে বৃষ্টির পানিতে। অনেক এলাকায় মাটিতে লুটে পড়া ধান গাছগুলো উঠিয়ে মুঠি বেঁধে দিতে দেখা যায় কৃষকদের। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে কৃষকরা এসব কাজ করছেন।
কৃষক ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনি প্রায় ৩৫ বিঘা জমিতে রোপা-আমন মৌসুমের ধান লাগিয়েছেন। সপ্তাহ দু’য়েক সময় পেলে ধান কাটা শুরু করতে পারতেন। কিন্তু ঝড়ো বাতাসে অনেক ক্ষেতের ধান মাটিতে পড়ে গেছে।
একই কথা জানিয়ে কৃষক আকবর হোসেন বলেন, প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। এরমধ্যে এখনো অনেক ক্ষেতের ধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ কৃষক।
দুলাল হোসেন, ইদ্রিস আলী, রেজাউল করিম বাবলুসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, ধানের দাম কয়েক বছর ধরে বেশ ভালোই যাচ্ছে। এবারও তারা উৎপাদিত ফসলের ভালো দাম পাবেন-এমন আশায় ছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি আর ঝড় সেই আশা অনেকটা শেষ করে দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই পুরো জেলায় তিনিসহ কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেন।
মাত্র ১৩শ’ হেক্টর জমির ফসল বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাসে মাটিতে পড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা-আমনের ধান লাগানো হয়েছে। তাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সমস্যা হবে না। বরং বৃষ্টিপাতের কারণে পোকামাকড়ের উৎপাত বন্ধ হয়ে গেছে, যোগ করেন কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএস