ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গভীর রাতে জমজমাট গাঁও-গ্রামের মাছ বাজার

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
গভীর রাতে জমজমাট গাঁও-গ্রামের মাছ বাজার গভীর রাতে জমজমাট গাও-গ্রামের মাছ বাজার- ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: গভীর রাতে জমজমাট হয়ে ওঠে গাঁও-গ্রামের মাছের বাজার। তাও আবার ১টি দুটো নয় বিভিন্ন প্রজাতির মনে মনে মাছ উঠছে সেই বাজারে। গভীর রাতের এ বাজার আবার রাতের অন্ধকারেই মিলিয়ে যাচ্ছে শুনশান নিরবতায়।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের হারতা বন্দর। বরিশালের নামকরা এই বন্দর যেখানে তিনদিক থেকে নদী বহমান রয়েছে।

দিনের বেলা পুরো বন্দর এলাকা জমজমাট থাকলেও উত্তর পারের একমাত্র পাইকারি মাছের বাজারটি বসে রাতের বেলায়।

বর্তমান সময়ে সড়ক ও নদীর মধ্যবর্তী স্থানের মাছের এই বাজারটি শুরু হয় রাত ১২টার পর থেকে। যেখানে আবার রাত ৪টার মধ্যেই বেচা-বিক্রিও শেষ হয়ে যায়। এই বাজারকে ঘিরে অনেকে যেমন মাছ চাষ করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, আবার এখান থেকে অনেকের রিজিকের সন্ধান মিলছে।
গভীর রাতে জমজমাট গাও-গ্রামের মাছ বাজার- ছবি: বাংলানিউজ
হারতা মাছ বাজারের বহুমুখি ব্যবসায়ীক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আড়তদার নরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বাংলানিউজকে বলেন, হারতা বাজারের অবস্থান পুরাতন হলেও সন্ধ্যা নদীর তীরে দেড়যুগ আগে এ মাছ বাজারের শুরু। প্রথমে ২/১ জন ব্যবসায়ী থাকলেও এখন ১৭টি আড়তকে ঘিরে শত শত ব্যবসায়ীর লাখ লাখ টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে এ বাজার।

তিনি বলেন, বাংলা মাস ধরে বাজারের সময়সূচির পরিবর্তন ঘটনায়। অগ্রাহয়ন থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত গভীর রাতে বাজার শুরু হলেও ফাল্গুনের শেষ থেকে কার্তিক পর্যন্ত বিকেল থেকেই বাজার শুরু হয়ে যায়। যা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। পুরো বাজারকে ঘিরে মাছ চাষি, শ্রমিক, ট্রলার-টমটম-ভ্যান ও ট্রাকের চালক-সহকারী এবং পাইকার-আড়তদার মিলে হাজারও মানুষের কর্মযজ্ঞ চলে এখানে। তবে সকালে এ বাজারে আসলে কিছু বোঝার উপায় থাকবে না।
গভীর রাতে জমজমাট গাও-গ্রামের মাছ বাজার- ছবি: বাংলানিউজ
স্থানীয় জামবাড়ী এলাকার নিখিল বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, এই বাজারে পাইকারিভাবে রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভারকাপ, ব্রিগটে, গ্রাসকার্প, তেলাপিয়া, পুটি, পাঙ্গাস, কৈ, চিংড়িসহ প্রায় সব ধরনের সাদামাছ বিক্রি হয়ে থাকে। অপরদিকে কার্তিক থেকে মাঘ পর্যন্ত বাজারে স্থানীয় বিলের কৈ, খলিসা, শিং, পুটিসহ নানান দেশীয় মাছের সমারোহ ঘটে।

এসব মাছ উজিরপুর ছাড়াও পার্শবর্তী বানারীপাড়া ও আগৈলঝাড়া উপজেলার ২০-২৫টি গ্রাম থেকে এখানে আসে বলে জানান উত্তম বাড়ৈ নামে অপর ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ৪৪ কেজিতে ১ মন হিসেবে এ বাজারে মাছের দাম বরফের ওপর নির্ভর করে। বরফ সংকট হলে মাছের দাম পড়ে যায়।
গভীর রাতে জমজমাট গাও-গ্রামের মাছ বাজার- ছবি: বাংলানিউজ
বাজার ঘুরে দেখা যায়, হারতা বন্দরের উত্তর পারের এ মাছের বাজারটি নদী ও সড়ক সংলগ্ন হওয়ায় আশপাশের মাছ চাষিরা নৌ ও সড়ক পথে মাছ পরিবহন করে। এসব মাছ প্রক্রিয়াজাত করতে ৫টি বরফকল রয়েছে। বাজারের অপরপ্রান্তে পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও গত বছরের ২২ নভেম্বর ডাকাতিন ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে বাজারে রাতের বেলা পুলিশ থাকে। তবে বাজার কেন্দ্রীক একটি মাত্র কৃষি ব্যাংক থাকায় এবং কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় ভোগান্তির যেন শেষ নেই ব্যবসায়ীদের। এ বাজার থেকে পাইকাররা রাতের মধ্যেই বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জায়গা থেকে শুরু করে ফরিদপুর, ঢাকা, মাদারীপুর ও সিলেটে মাছ নিয়ে যায়।
গভীর রাতে জমজমাট গাও-গ্রামের মাছ বাজার- ছবি: বাংলানিউজ
স্থানীয় উপজেলা মৎস কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, এই বাজার ঘিরে আশপাশের এলাকায় শতাধিক মাছের ঘের রয়েছে। এখানকার বেশিরভাগ একফসলি জমি হওয়ায় আর মাছ চাষে সফলতা পাওয়ায় দিনে দিনে এর পরিমাণ বাড়ছে। ভালো পোনা ও উন্নত মানের খাবারের বিষয়টিতে সবসময়ই গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে কোল্ড স্টোরেজেরে অভাবে ব্যবসায়ীরা ভালো দাম পাচ্ছে না এটাও ঠিক।

বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্রিজিংসহ এখানকার মাছ যাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এবং বাহিরেও রপ্তানি করতে পারে সেজন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
এমএস/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।