সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় সাইন্সল্যাব এলাকা থেকে শুরু করে নীলক্ষেত-নিউমার্কেট এলাকার মার্কেটগুলোর ভেতরে সর্বত্র মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। কেননা সাশ্রয়ী মূল্যে পছন্দসই পণ্য কিনতে নিউমার্কেটের কদর রয়েছে।
শুক্রবার (১ জুন) ছুটির দিন থাকায় এ ভিড়ের মাত্রা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারাসহ আগত আসা ক্রেতারা। শুধুমাত্র ঢাকার নয়, ঢাকার আশপাশের গাজীপুর, সাভার এমনকি মানিকগঞ্জ থেকে অনেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। ঢাকার বাইরের মানুষদের পদচারণাই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। কড়া রোদের তাপদাহ না থাকায় কিছুটা স্বস্তি নিয়ে মার্কেটে ঘুরতে দেখা গেছে ক্রেতাদের।
মানিকগঞ্জ থেকে নিউমার্কেটে পুরো পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছেন শফিকুল বাহার। বাস থেকে বলাকা সিনেমা হলের সামনে নেমেই তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করছেন কোনোদিক থেকে শুরু করবেন? উত্তরে গাউছিয়া থেকে কেনাকাটা শুরু করার সায় দিয়ে এগিয়ে যান।
কথা বলতে চাইলে শফিকুল বলেন, অনেক আগে থেকেই টার্গেট করে রেখেছিলাম আজকে ঈদের শপিং করতে আসবো। কারণ আমি ব্যবসায়ী। ঈদের আগে সময় পাবো না। তাছাড়া গাবতলীর জ্যাম শুরু হওয়ার আগে কেনাকাটা সেরে নেওয়াও একটি লক্ষ্য। নিউমার্কেট এলাকায় একসঙ্গে সবই সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায় তাই ঈদের শপিংটার জন্য এই জায়গাটাই শ্রেয়।
এদিকে নিউমার্কেট এলাকার বাইরের ভিড়ের জন্য ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে গিয়েও হিমসিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। কখনও ঘটে যাচ্ছে বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট দুর্ঘটনা। তেমনই হঠাৎ করে একটি প্রাইভেটকার একজন পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেছে। মাথা ফেটে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা নিয়ে গেলো হাসপাতালে। তৎক্ষণাৎ এরকম সেবা দিতে নিউ সুপার মার্কেটের উল্টো পাশে রয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম।
এই এলাকার নিরাপত্তার বিষয়ে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় অনেক মানুষ আসেন কেনাকাটা করতে। এ সময় ভিড়ের মধ্যে অনেক সময় ছিনতাইসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে। সে ব্যাপারে আগত ক্রেতাদের পুরোপুরি নিশ্চিন্ত রাখতে আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য এ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছি। আশা করি এবার কোনো দুর্ঘটনার খবর শোনা যাবে না। অতিরিক্ত গাড়ি বিশেষ করে প্রাইভেটকারের চাপের জন্য ট্রাফিক পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। নিউমার্কেটের বাইরের পরিস্থিতির সঙ্গে ভেতরের পরিস্থিতির কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেছে। ভেতরে কোথাও অনেক ভিড় আবার কোথাও একেবারে চাপ কম লক্ষ্য করা গেছে।
এর কারণ হিসেবে রফিক ট্রেডার্সের বিক্রেতা রবিন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা শহরের মানুষ পুরোপুরি এখনও আসা শুরু করেনি। আর তারা না এলে নিউমার্কেটে উপচেপড়া ভিড় দেখা যাবে না। এখনকার বেশিরভাগ ক্রেতা ঢাকার বাইরের। এর একমাত্র কারণ এখনও তেমন কেউ বেতন পায়নি। তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে বা গত শুক্রবারের চেয়ে চাপ বেশি। তবে চাপ আরও বাড়বে আর দুই তিনদিন পর থেকে।
মার্কেটে নারীদের পোশাক সামগ্রী শাড়ি, থ্রি-পিস, শিশুদের পোশাক, থান কাপড়ের দোকান, জুয়েলারি শপ, ব্যাগ, স্যান্ডেল-জুতা, শিশুদের খেলনাসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য পণ্যের সমাহার। আছে দর্জির দোকান। এছাড়া নিউমার্কেট এলাকার বাইরে সাইন্সল্যাব হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত ফুটপাত জুড়ে রয়েছে হকারদের দৌরাত্ম্য। তবে হকারদের ব্যবসাও জমে ওঠেনি বলে জানিয়েছেন তারা।
কাঁধে করে ব্যাগ বিক্রি করছিলেন সুমন। তিনি জনান, এহনও বেচা-বিক্রি শুরু হয় নাই। মাইনষে বেতন পাইলে আইবো। এহন খালি ছুটির দিনে আগের চেয়ে ভালা বিক্রি হয়।
বেশি কথা বলার সময় নাই জানিয়ে আবারও এক ব্যাগ ২শ টাকা বলে হাকডাক দিতে দিতে আবার এগিয়ে গেলো তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৮
এমএএম/এএটি