ডিমের দাম এতো বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা দাবি করছেন, এটিই ডিমের ন্যায্যমূল্য। তাদের মতে, এতোদিন লোকসান দিয়ে ডিম বিক্রি করছিলেন তারা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, সোমবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হয় ৩২ থেকে ৩৬ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৪ টাকা। আর একমাস আগে এই ডিম বিক্রি হতো ২২ থেকে ২৬ টাকায়।
টিসিবির সহকারী কার্যনির্বাহী (বাজার ও তথ্য) শাহিদ ইবনে মিরাজের কাছে ডিমের মূল্য বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুধু বাজার দর দেখে তা আমাদের ওয়েব সাইটে দিয়ে রাখি। দাম বৃদ্ধির কারণ আমরা বলতে পারবো না।
এদিকে ডিমের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা পরস্পরকে সব সময় দোষ দিয়ে থাকেন। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর পাইকারদের দাবি, তারা এক টাকা বাড়ালে খুচরা বিক্রেতারা তিন টাকা বাড়িয়ে দেন। তবে পাইকারি বিক্রেতারা বেশি দায়ী করছেন উৎপাদনকারী খামার মালিকদের। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে গরমের কারণে ডিম নষ্ট হওয়া এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াসহ আরও অনেক কিছু।
ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সাইন্স অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। ৬/৭ মাস আগে বার্ড ফ্লুতে অনেক মুরগি মারা গেছে। এতে মুরগির প্রোডাকশন কমে যায়। ফলে ডিমও কম উৎপাদন হয়েছে।
তিনি বলেন, গত একবছর ধরে খামারিরা লোকসান দিয়ে ডিম বিক্রি করেছেন। প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় ছয় টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে হয়েছে চার থেকে সাড়ে চার টাকায়। এই লোকসানের ফলে অনেক খামারি মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। সে কারণে প্রোডাকশন কমে গেছে। একই সঙ্গে বাজারে ডিমের চাহিদাও বেড়ে গেছে। ফলে দাম বেড়ে গেছে।
ডিমের দাম বাড়ার আরেকটি বড় কারণ মধ্যস্বত্বভোগী বলে জানান মাহবুব। তিনি বলেন, খামারি থেকে ভোক্তা। এর মাঝে একটি শ্রেণি আছে যারা দুই থেকে আড়াই টাকা লাভ করে। এটা নিয়ে ভাবতে হবে। সরাসরি খামারি থেকে খুচরা বাজারে ডিম পৌঁছাতে পারলে ডিম প্রতি আরও দু’টাকা কমে ক্রেতারা কিনতে পারবেন।
ডিমের দাম কত দিন নাগাদ এ জায়গায় স্থিতিশীল হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খামারে নতুন করে মুরগি উঠালেও ডিম আসতে সময় লাগবে অন্তত চার থেকে পাঁচ মাস। এই সময়ের মধ্যে দাম কমার সম্ভাবনা কম।
বাজারে ৩৫ টাকা হালি দরে ডিম বিক্রি হলেও হাতবদল হয়ে উৎপাদকের কাছে যেতে যেতে এ দাম থাকে না। তা ছাড়া এতোদিন যারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ডিম বিক্রি করতে গিয়ে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তাদের অভাবেই বাজারে ডিমের সরবরাহ কমে গেছে।
সারাবছর সমান হারে ডিমের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাইলে বন্ধ খামারগুলো চালু রাখতে হবে এবং খামারিদের উপযুক্ত দামপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বাড্ডা গুদারাঘাট বাজারে ডিম ক্রেতা শিমুল বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ দিন আগে এক ডজন হাসের ডিমের দাম ছিল ১১০ টাকা। এখন কিনলাম ১৪০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বাড়ার কারণে হাসের ডিমের দামও বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এখন ডিম খাওয়াও কষ্টকর।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৮
এমএইচ/টিএ