বাংলাদেশের কাঁচা চামড়ার বড় বাজার চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ডিউটি ইস্যু নিয়ে চীনের বাজারে বাংলাদেশি কাঁচা চামড়ার চাহিদা কমে গেছে।
গত পাঁচ বছর ধরে অব্যাহতভাবে কাঁচা চামড়ার দাম কমছে। সেই ধারা এবারও থাকবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা গত ঈদের পর এখন পর্যন্ত সেভাবে চামড়া রফতানি করতে পারেনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। তাই আসন্ন কোরবানি ঈদে পশুর চামড়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। খুচরা বাজারে কিনলেও পাইকারি বাজারে চামড়া কেনার লোক খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হবে বলে জানান তারা।
আসছে ঈদে আবারও দাম কমানোর চিন্তা করছে চামড়া শিল্পে সংশ্লিষ্টরা। প্রতি বছরের মতো এবারও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম পড়ে যাওয়াকেই দায়ী করা হচ্ছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৩ সালের পর থেকেই কাঁচা চামড়ার দাম কমতে শুরু করেছে। ২০১৩ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া (লবণযুক্ত) দাম ছিলো ৮৫-৯০ টাকা। এরপর ২০১৪ সালে তা কমিয়ে করা হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। অব্যাহতভাবে দাম কমে ২০১৫ সালে দাঁড়ায় ৫০-৫৫ টাকা। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ছিলো ৫০ টাকা। সর্বশেষ ২০১৭ সালে গরুর চামড়া নির্ধারিত দাম ছিল সর্বনিম্ন ৪০ টাকা। তবে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খাসির চামড়ার মূল্য সারাদেশে প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়ার মূল্য সারাদেশে প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিতে অনাগ্রহী ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করেন, দাম নির্ধারণ করে দিলে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টকর।
বাংলাদেশে পশুর চামড়ার ৬০ শতাংশ আসে ঈদুল আযহায়। তাই এই সময় চামড়ার দাম নিয়ে একটা টানাহেঁচড়া চলে। এবারও আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে।
নির্বাচনী বছরে এবার পশু কোরবানি বেশি হবে। আর এতে আশঙ্কায় আছেন অনেকে। কেননা নির্বাচনী বছর হওয়ায় রাজনৈতিক নেতারা চাইবেন নিজ এলাকার গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে কোরবানির মাংস বিলিয়ে যার যার মনযোগ আকৃষ্ট করতে। এবারও এক কোটির বেশি কোরবানি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পক্ষে না। এটা আসলে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জন্য। আর এই বছর পশুর কাঁচা চামড়ার দাম কমবে ছাড়া বাড়বে না। এবার চামড়া কিনবে কে? চাহিদাই তো নেই। গত বছরের চামড়াই এখনও রফতানি হয়নি। যে হারে কেমিক্যালের দাম বেড়েছে তাতে চামড়া প্রক্রিয়জাতকরণই কঠিন। আবার নতুন করে চামড়া কিনে কি করবো আমরা।
তার কথাতেই স্পষ্ট এবছর আর দাম বাড়ছে না। আবার দাম নির্ধারণ নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত আরেক ব্যবসায়ী নেতা বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বাংলানিউজকে বলেন, এবার চামড়ার দাম বেশ কমবে। তবে কত কমবে তা এখনই বলতে পারছি না।
রুমা ট্যানারির মালিক আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, এবার দাম কমানো ছাড়া উপায় থাকবে না। আমাদের চায়নার মার্কেট নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে কোন বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে না। এসব বিষয় চিন্তা করে চামড়া কিনতে হবে।
প্রতিবছর পশুর চামড়ার দাম কমলেও বাড়ছে পশুর দাম। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের খুচরা বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মে মাসে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৩৫০ টাকা। এক বছর পর তা বাড়িয়ে অর্থাৎ ২০১৬ সালের মে মাসে তা দাঁড়ায় ৩৮০ টাকা কেজি। এছাড়া ২০১৭ সালে প্রতি কেজি গরুর মাংসের খুচরা দাম নির্ধারণ করা আছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা। এবারও তাই রয়েছে। কাজেই গরুর দাম বাড়লেও কমছে চামড়ার দাম।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
এসএম/আরআর