হাটের চমক মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার কৃষক খাইরুল ইসলাম খান্নুর ৫৫ মণ ওজনের ষাঁড় ‘রাজা বাবু’। হাটে এমন দরপতনে রাজা বাবুরও দাম কমেছে।
সোমবার (২০ আগস্ট) রাজা বাবুর দাম উঠেছিলো ১৮ লাখ টাকা। অথচ মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) এই রাজা বাবুর দামই চাওয়া হচ্ছে মাত্র ১৫ লাখ টাকা। বিশালদেহী রাজা বাবুকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খাইরুলের স্ত্রী পরিষ্কার বেগম ও মেয়ে ইতি আক্তার। গরুর দাম কমে যাওয়ায় কান্নাকাটি করে জ্ঞান হারানোর অবস্থা ইতির। কোনো ক্রেতা আসলে তার কাছে কাকুতি-মিনতি করছেন পরিষ্কার বেগমও। কারণ এই গরু রাখার মতো সামর্থ্য নেই তাদের। গরুর জন্য প্রতিদিন দুই হাজার টাকা খরচ হয়। ১০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিয়ে হাটে তোলা হয়েছে রাজা বাবুকে। হাটে এসেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন সবার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ।
প্রথমে গাবতলী হাটের প্রবেশদ্বারে রাখা হয়েছিলো রাজা বাবুকে। কিন্তু উৎসুক জনতা বিরক্ত করতে থাকে। ফলে গাবতলী হাটের ইজারাদাররা রাজা বাবুকে হাটের ভেতরে রেখেছে। হাটে দুইদিনে প্রায় তিনটি স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে রাজা বাবুর। তারপরও জনতার ভিড় লেগেই আছে। এখন রাজা বাবুসহ আরও গরু পালতে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত পরিষ্কার বেগম। বাড়িতে অনেকে ১৯ থেকে ২০ লাখ টাকা দাম বলেছিলো। কিন্তু বাড়তি লাভের আশায় এখন হাটে কেউ দামই বলে না। রাজা বাবুকে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করার আশা ছিলো তাদের।
মনে কষ্ট নিয়ে পরিষ্কার বেগম বলেন, ‘রাজা বাবু বাংলাদেশের বড় গরু। হাটে চ্যাম্পিয়ন গরু আইচে। দেশে এমন কোনো লোক আছে না যে গরিব মানুষ এতো বড় গরুডা পালছে, ন্যায্য দাম দিয়ে তারা গরুডা কিনুক। বড় লোকেরা গরুডা দেইখা আমার মতো গরিবেরে ন্যায্য দামডা দিয়া দিক। রাজা বাবুরে ফেইসবুক-ইউটিউবে ছাইড়া দিছিলাম বড় আশা করে। মানুষ গরুডাকে দেখবো একটা দাম দিয়া কিনবো। ’
হাটে কেমন দাম বলেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজ কোনো দামাদামি হইতেছে না। আমি সবার দুইটা পা ধরি রাজা বাবুকে কিনে আমাদের বাঁচান। ’
রোববার (১৯ আগস্ট) ভোরে হাটে আনা হয়েছে বড় ষাঁড়টিকে। এরপর থেকেই শত শত উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। কেউ তুলছেন সেলফি, কেউ ব্যস্ত ফটোসেশনে। কিন্তু উৎসুক জনতার এমন আচরণে বিরক্ত ‘রাজা বাবু’। গরম পছন্দ নয় ‘রাজা বাবু’র।
‘রাজা বাবু’র থাকার ঘরে লাগানো থাকে পাঁচটি ফ্যান, ২৪ ঘণ্টায় ২০ বার করানো হয় গোসল। অথচ শত শত মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতি আক্তার এসএসসি পাস করার পর ২০১৭ সালে সাভারে শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মাছ চাষ ও কৃষিবিষয়ক তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
‘রাজা বাবু’র প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকে ২০ কেজি ভুষি, ১০ হালি কলা, ২ কেজি মাল্টা, পাঁচ হালি কমলালেবু, ২ কেজি চিড়া, ১ পোয়া ইসুপগুলের ভূসি, কয়েকটি বেল ও ডাব দিয়ে বানানো শরবত। ‘রাজা বাবু’র বয়স তিন বছর ১০ মাস। ছয় দাঁতের ষাঁড়টির উচ্চতা ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি, লম্বা ৮ ফুট, বুকের পরিমাপ ১০ ফুট, মুখ চওড়া ৩ ফুট ২ ইঞ্চি, গলার বেড় ৫ ফুট, শিং ১ ফুট লম্বা ও লেজের দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি। বর্তমানে গরুটির ওজন ৫৫ মণের কাছাকাছি। দুই বছর আগে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কেরানিগঞ্জ থেকে রাজা বাবুকে কেনেন খান্নু।
রাজা বাবুর বিক্রি না হওয়াই উৎসুক জনতাও সমব্যথিত। মিরপুর থেকে হাটে গরু কিনতে এসেছেন আজিজুল হক। তিনি বলেন, রাজা বাবুকে কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। আমরা ছাগল কিনে কোরবানি দেওয়া মানুষ। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের অনুরোধ রাজা বাবুকে কিনে গরিব মানুষকে রক্ষা করেন। গরুটার কিছু হয়ে গেলে পুরো পরিবারই শেষ হয়ে যাবে। কারণ পুরো পরিবার গরুটার উপরে নির্ভর। দেশে অনেক ব্যক্তি আছে তাদের অনুরোধ রাজা বাবুকে কিনে নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
এমআইএস/আরআর