কবির জানান, দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়াটির সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৪৫০ টাকা। গেল বছর যে চামড়া ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এ বছর সে চামড়া ৩০০ টাকাও কেউ নিচ্ছে না বলে জানালেন আফসার উদ্দিন নামের আরেক কোরবানি দাতা।
তিনি জানান, কোরবানিকৃত এ পশুর চামড়া গরিব অসহায়দের হক। চামড়ার দাম কম হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
ফেনীর শহরতলীর পাঁচগাছিয়া। বৃহত্তর নোয়াখালীর সর্ববৃহৎ চামড়া বাজার। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার চামড়া বিক্রি হয় এ বাজারে। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, মিরসরাই ও চৌদ্দগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ বাজারে পশুর চামড়া আসে। কথা হয় সে বাজারের ব্যবসায়ী নেতা নিজাম উদ্দিন ভূইঁয়ার সঙ্গে।
তিনি জানান, চামড়া নিয়ে এমনিতেই তারা রয়েছেন বিপাকে। গেল বছর যে চামড়া তারা ট্যানারি কোম্পানিগুলোকে দিয়েছেন তার টাকাও পাননি। সব মিলিয়ে চামড়ার প্রতি অনীহা রয়েছে এ খাতের বড় বিনিয়োগকারীদের। যার প্রভাব পড়েছে এবারের চামড়ার বাজারে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল বছর এ বাজারে চামড়া সংগ্রহ হয়েছে ৩ লাখ। যার আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা। কিন্তু এ বছর তার তিন ভাগের এক ভাগ দামও পাওয়া যাবে না।
জানা যায়, ফেনী জেলা শহর ছাড়াও উপজেলায় গরু ও ছাগল মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু কোরবানি দেওয়া হবে। এসব চামড়া বাজারজাত ও সংরক্ষণের জন্য ফেনীর পাঁচগাছিয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠেছে প্রায় ৫০টি আড়তদার প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই চামড়া সংগ্রহ করে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন।
প্রতিবছর কোরবানির ঈদের সময় এসব আড়তে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ চামড়া বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব বাজারে চামড়ার দর না থাকায় এবার বেশ চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া লবণের দাম ও শ্রমিকের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি এবং বিদেশিদের অনাগ্রহের কারণে ব্যবসায়ীরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এছাড়া সীমান্ত দিয়ে পাচারের আশঙ্কা তো রয়েছেই।
এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি-৪) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সহিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনোভাবেই চামড়া পাচার না হয় সেজন্য কড়া নজরদারি থাকবে। পাচার রোধে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সড়কে ৪৩টি স্পটে বিজিবি চেকপোস্ট থাকবে।
সরেজমিনে পাঁচগাছিয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোরবানি পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের জন্য তেমন তোড়জোড় নেই তাদের।
এ ব্যাপারে পাঁচগাছিয়া বাজারের বড় আড়তদার নুর নবী ট্রেডার্সের মালিক নুর নবী মেম্বার বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার বেশি কোরবানি হতে পারে। সে অনুপাতে পশুর চামড়াও সংগ্রহ হবে বেশি। এসব চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হবে। তবে এবার চামড়ার দাম কম।
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এবার মন্দাভাব থাকায় প্রতি ফুট চামড়া ২০ টাকারও কমে বিক্রি হচ্ছে।
এ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য স্বল্প পুঁজির কিছু লোক মাঠে নামেন। তারা এ চামড়া কিনে বিক্রয় করেন পাঁচগাছিয়া বাজারে।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এদের ঠেকাতে মাঠে নেমেছে আড়তদারদের একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় খুচরা বিক্রেতারা। ফলে পাঁচগাছিয়ার কোনো ব্যবসায়ী খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনতে চান না। গত কয়েক বছরে লাভের আশায় মাঠে নেমে তাই লোকসান গুণতে হয়েছে খুচরা বিক্রেতাদের।
সূত্র জানায়, ওই বাজারের কোনো কোনো ব্যবসায়ী ৫/৭ কোটি টাকা পর্যন্ত সিন্ডিকেটদের মাধ্যমে মাঠে ছাড়েন। কম দামে চামড়া সংগ্রহ করতে ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলের আশ্রয় নেন। ঈদের আগে হঠাৎ করে তারা চামড়ার দাম কমে গেছে বলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নতুন দাম প্রচার করেন। তাদের ধার্যকৃত দামেই খুচরা বিক্রেতাদের গ্রাম থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে বাধ্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
এসএইচডি/আরবি/