ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নন-ব্র্যান্ড ছোট ও মাঝারি ক্রেতারাই এখন বাংলাদেশের ভরসা। তবে যেসব ভোক্তা নন-ব্র্যান্ড পণ্য ব্যবহার করেন তারা এখন আর্টিফিশিয়াল লেদারের পণ্যের দিকে ঝুঁকছে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের চামড়া খাত অন্ধকারের পথে হাঁটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে শিগগিরই কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করতে না পারলে ভয়াবহ সংকটে পড়তে চলেছে এ শিল্প। আর এ কারণেই বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানি গত কয়েক বছর ধরে কমছে।
জানা যায়, ৫ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫০ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের চামড়া রপ্তানি হলেও গত অর্থবছরে এটি নেমে এসেছে ১৮ কোটি ৩১ লাখ ডলারে। আগের বছরের তুলনায় যা ২১ দশমিক ২৮ শতাংশ কম।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, কোরিয়ার হোয়াইট ইন্ডাস্ট্রি নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ কন্টেইনার চামড়া কিনতো। তারা এখন বাংলাদেশ থেকে আর চামড়া কিনছে না। এরকম বড় বড় অন্তত ১৫টি ব্রান্ড বায়ার বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যারা এখন পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ থেকে চামড়া সংগ্রহ করছে। এছাড়া ব্রাজিলের ক্রেতারা এখন কাঁচা চামড়া কিনে নিজেরাই প্রসেস করছে।
জানা গেছে, লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) কমপ্লায়েন্স সনদ ছাড়া ব্র্যান্ড বায়াররা এখন আর পণ্য নিচ্ছে না। বাংলাদেশে একমাত্র অ্যাপেক্স ট্যানারি এই সনদ পেয়েছে। অর্থাৎ এই ট্যানারি ছাড়া আর কারো পণ্য ব্র্যান্ড বায়াররা কিনছে না। অন্যান্য বড় ট্যানারিগুলো এই সনদের আবেদন করেও পাচ্ছে না সাভারের চামড়া শিল্পপার্ক পরিপূর্ণ না হওয়ায়। শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার অভাব, রাস্তা-ঘাট অপ্রতুল, সিইটিপি (কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার) শতভাগ কার্যকর না হওয়া, ডাম্পিং স্টেশন প্রস্তুত না হওয়াসহ বিভিন্ন দুর্বলতার কারণে ট্যানারিগুলো এই সনদ পাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন মাহিন বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশের চামড়া রপ্তানির ৬০ শতাংশই যেতো চীনে। এখন যা ১৫ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, বড় ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, ছোট ক্রেতারা যাদের জন্য পণ্য বানায় সেই মধ্যবিত্ত ও নিম্মবিত্তদের কাছে এখন চামড়ার চেয়ে রেক্সিন বা আর্টিফিশিয়াল লেদারের কদর বেড়েছে। এই বাস্তবতার মধ্যে পড়ে আমাদের বাজার সংকুচিত হয়ে এসেছে।
তবে দ্রুততার সঙ্গে কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে পুরাতন ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও নতুন বাজার খোঁজার ব্যাপারে পরামর্শ দেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বাজার ধরতে সরকার ও ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলেও তিনি মনে করেন।
কথা হয় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পের জন্য এখন ক্রান্তিকাল চলছে। আশা করছি এক বছরের মধ্যে সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো আমরা। সিইটিপি এখন কিছুটা ভালো কাজ করছে। ডাম্পিং নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে। সরকারের কিছু দুর্বলতা আছে, আমাদেরও কিছু দুর্বলতা আছে। অল্প সময়ের মধ্যে এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে বড় ক্রেতাদের আবার ফিরিয়ে আনতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮
এজেড/এনএইচটি