ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সচেতনতার অভাবে নির্ধারিত স্থানে কোরবানিতে সাড়া মেলেনি

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
সচেতনতার অভাবে নির্ধারিত স্থানে কোরবানিতে সাড়া মেলেনি ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ফাঁকা নির্ধারিত কোরবানির স্থান

ঢাকা: সচেতনতার অভাব এবং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অভ্যাসের কারণে দুই সিটি করপোরেশনের আহ্বানে সাড়া দেয়নি নগরবাসী। ফলে ঈদুল আজহায় প্রায় খালি অবস্থায় দেখা যায় পশুর জবাই ও মাংস কাটার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নির্ধারিত সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থান।

সোমবার (১২ আগস্ট) দেশজুড়ে পালিত হয় মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) চলছে ঈদের দ্বিতীয় দিন।

অনেকে এদিনও পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। তবে আজও সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে আগ্রহ দেখা যায়নি রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের মধ্যে।  

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে এবং কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণের লক্ষ্যে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কিছু স্থান পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এবারও উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডে পাঁচটি করে মোট ২৭০টি এবং মহাখালীতে একটি আধুনিক পশু জবাইখানা ও দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ডে পাঁচটি করে মোট ৩৭৫টি স্থান নির্ধারিত ছিল। এসব স্থানে পশু নিয়ে এসে কোরবানি দিতে নগরবাসীদের উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাও চালায় দুই করপোরেশন। মহাখালীতে মাংস কাটার জন্য কসাইয়ের মূল্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং পুরো ডিএনসিসিজুড়ে নাগরিকদের বাড়িতে বাড়িতে বিনামূল্যে মাংস পৌঁছে দেওয়ারও অফার ছিল। কিন্তু এতকিছুর পরও ঈদের প্রথম দিনেও প্রায় ফাঁকাই দেখা যায় সেসব স্থান। এমনকি মহাখালীর আধুনিক জবাইখানায় পশু আসে মাত্র দুইটি, তাও একই ব্যক্তির।  

নগরবাসীদের এমন নিরুৎসাহী হওয়ার পেছনে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার অভাব এবং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সামাজিক প্রেক্ষাপটকে কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে। অনেকে আবার বাড়ির আঙিনায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পশু জবাই এবং মাংস কাটার মধ্যে একধরনের বিনোদন খুঁজে পান। কেউ কেউ আবার আস্থা রাখতে পারছেন না সিটি করপোরেশনের নেওয়া ব্যবস্থার ওপর।  

প্রতিবারই ঈদের দ্বিতীয় দিন কোরবানি দিয়ে থাকেন মিরপুরের পল্লবী এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন। সিটি করপোরেশনের জায়গায় না নিয়ে বাড়ির আঙিনায় কেন কোরবানি দিচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, প্রতিবার এভাবেই দেই। সঙ্গে ছেলে, নাতিরাও থাকে। ছোটরা দেখে, ওদের ভালো লাগে। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের জায়গায় পশু নিয়ে যাওয়া আবার সেখান থেকে মাংস নিয়ে আসা ঝামেলার একটা ব্যাপার। আর তারা সরকারি লোকজন। কি ব্যবস্থা রেখেছে কে জানে!

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমাদের দেশে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে পশু জবাই ও মাংস কাটা সম্পূর্ণ নতুন ধারণা। তার থেকে এখন যেভাবে কোরবানি হচ্ছে মানে একরকম হৈ-হুল্লোড় করে কোরবানি দেওয়া, এটা দীর্ঘদিনের অভ্যাস, একরকম রীতিতে পরিণত হয়েছে। এর মাঝেই ঈদের আনন্দ খুঁজে পান তারা। যে কারণে নতুন ব্যবস্থায় তাদের সেভাবে আগ্রহ এখনো আসেনি। এই অবস্থার পরিবর্তন হতে সময় লাগবে।  

সময় লাগবে তা মনে করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামও। তবে ব্যবস্থা যেহেতু চালু হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে পারলে অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন তিনি। বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ব্যবস্থা একটি চালু করলাম। এখনই এটাকে সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে হবে না। মহাখালীতে একজন পশু নিয়ে এসেছেন। এটাও ইতিবাচক দিক। পরেরবার ১০ জন আসবেন। এভাবেই একদিন সবাই নতুন এই ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হবেন। আমদের পরিবেশকে সুন্দর রাখতে, বর্জ্য দ্রুত অপসারণ করতে নিজেদের স্বার্থেই একদিন আমরা এমনটা করবো। আমার বিশ্বাস আমরা নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সবাই একসঙ্গে আমাদের শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
এসএইচএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।