ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মজুদদারদের শিক্ষা দিতে পেঁয়াজ না কেনার পরামর্শ মন্ত্রীর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৯
মজুদদারদের শিক্ষা দিতে পেঁয়াজ না কেনার পরামর্শ মন্ত্রীর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রী টিপু মুনশি, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘোষণায় মজুদ রেখে ব্যবসয়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। তাই মজুদদারদের শিক্ষা দিতে ভোক্তাদের পেঁয়াজ না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেছেন, সব ভোক্তা যদি সাতদিন পণ্যটি না কিনে, তাহলে তাদের পেঁয়াজ কিন্তু পচে যাবে। এ সুযোগটা তারা নিতে পরবেন না।

আমরা পেঁয়াজের জন্য হাহাকার করছি। এটা তাদের সুযোগ। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

বুধবার (০২ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ বা ১২০ টাকা কীভাবে হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমদানি করা পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দেশি পেঁযাজের ব্যবসায়ীরা এ সুযোগটা নিচ্ছেন। নয়তো কোনো অবস্থাতেই এত দামে বিক্রি হওয়ার কথা না। একটি সমস্যা আছে, কিছুদিনের মধ্য পেঁয়াজে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। সব খরচ ধরেও দাম কোন অবস্থাতেই ৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। দেখবো কোথাও মজুত করে রাখা হয়েছে কি-না। ইতোমধ্যে আমাদের মনিটরিং টিম বেশকিছু বাজারে গিয়ে জরিমানা করেছে। মন্ত্রণালয় থেকে যেটুকু করা সম্ভব আমরা সবটা করছি। আশা করছি, দুই একদিনের মধ্যে বা আজ-কালের মধ্যে দাম কমে যাবে।

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সুযোগ সন্ধানি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসলে খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণের ব্যবস্থা নেবে সরকার। মিয়ানমার থেকে ৪৮৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে। আরও ৪ থেকে ৫০০ টন আজ আসবে। ফলে কাল বা পরশুর মধ্যে দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকায় চলে আসবে।

টিপু মুনশি বলেন, পেঁয়াজের একটি দাম নির্ধারণ করতে শিগগির সবার সঙ্গে বসবো। এছাড়া ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক সেলে পেঁয়াজের পরিমাণ বাড়ানো হবে। তবে পেঁয়াজ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। যেন নিজেদের সক্ষমতায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হই। এটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধান। এছাড়া সব ভোক্তা যদি একসঙ্গে কিছুদিন পেঁয়াজ না কিনে, তাহলে এর একটা প্রভাব বাজারে পড়ে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি ভারত দাম যেটা বাড়িয়েছে, সেটা লজিক্যাল। তবে রপ্তানি যে বন্ধ করে দিয়েছে, এটার প্রভাব পড়তে একটু দেরি হবে। কারণ বাজারে আগেই অনেক পেঁয়াজ প্রবেশ করে আছে। তারপরও রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয় দিয়েছেন। আমাদের চেষ্টা হলো বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ সরবরাহ করা। আমরা সেটা চেষ্টা করছি। ভারতেও পেঁয়াজের দাম ১০০ রুপির কাছাকাছি। আজ মিয়ানমার থেকে ৪৮৩ মেট্রিক টন প্রবেশ করেছে। আশা করা যাচ্ছে আজকের মধ্যে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ টন পেঁয়াজ আসবে।

সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানকে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন বাজারে গিয়ে তাদের জেল-জরিমানা করছেন।

বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসলে দাম নির্ধারণ করে দেবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলবো। দেখি বাজারে একটি সহনীয় দাম নির্ধারণ করে দেওয়া যায় কি-না। যেহেতু আমরা একটি আমদানি দাম পেয়েছি। এর সঙ্গে বিভিন্ন খরচ ধরে একটি দাম নির্ধারণ করা যেতে পারে। তাই আশা করছি দুই-একদিনের মধ্যে দাম কমে যাবে।

মন্ত্রী বলেন, কার কাছে কী পরিমাণ মজুদ আছে, এটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু পেঁয়াজ পচনশীল। বেশিদিন মজুদ রাখতে পারে না। এছাড়া টিসিবি কিন্তু ১৫ টাকা ভর্তুকি দিয়ে বাজারে বিক্রি করে। তারা ৬০ টাকায় কিনে ৪৫ টাকায় বিক্রি করছে। তাই বলা যায়, ব্যবসায়ীরা খুব বেশি যদি লাভ করে তাও ৬০ টাকার ওপড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের হিসেবে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হওয়ার কথা।

টিসিবির ট্রাক সেলে গ্রাহকের তুলনায় পণ্য কম, তা বাড়ানো হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বাড়াতে কোনো সমস্যা নেই। তবে আমার এ বিষয়ে জানা ছিল না। এখন জানলাম। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ লাখ পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও প্রতিবছর ৭ থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন ঘাটতি থাকে। যার বেশির ভাগ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। মোট আমদানির প্রায় ৯০ ভাগ। আমাদের ভাগ্য ভালো যে মিয়ানমার থেকে কম দামে পাচ্ছি। প্রচুর এলসি ওপেন হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে আসায় খুব পজেটিভ হয়েছে। ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ হবে চিন্তাও করিনি। এটার ওপর তো কারও হাত নেই। এভাবে বন্ধ করে না দিলে এ ব্যর্থতার প্রশ্ন আসতো না। কিছু সুযোগ ব্যবসায়ীরা নিয়েছেন। তা আমরা দেখছি। তবে পেঁয়াজ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য আমাদের স্বাবলম্বী হতে হবে। এ জন্য প্রতিবছর আরও ৭ থেকে ৮ লাখ টন বেশি উৎপাদন করতে হবে। এটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধানের পথ।

তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে ১০টি মনিটরিং টিম কাজ করছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং গুদামে জরিমানা করা হচ্ছে। তবে দেশে কী পরিমাণ মজুদ আছে, সে হিসাব নেই সরকারের কাছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৯
জিসিজি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।