ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সংকটকালীন সুপারশপের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়তি বোঝা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২০
সংকটকালীন সুপারশপের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়তি বোঝা সাব্বির নাসির।

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক মানুষের আয় সংকীর্ণ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। মধ্যবিত্তের পাশাপাশি তাদের কাছেও পণ্য বিক্রি করতে চায় স্বপ্ন। কিন্তু এসব মানুষের জন্য ৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে পণ্য কেনা একটু বাড়তি চাপ। সবসময়ের জন্য না হলেও অন্তত সংকটকালীনও যদি সরকার ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে আমরা ভোক্তাকে কম দামে আরও বেশি পণ্য দিতে পারবো। যখন আমাদের ভ্যাটটা থাকবে না, তখন আমরা দামটা আরও কমাতে পারবো। ফলে সব শ্রেণীর মানুষ আমাদের কাছ থেকে পণ্য কিনবে।

করোনা ভাইরাস রোধে সরকার ঘোষিত এই সাধারণ ছুটির সময়ে সুপারশপগুলো কিভাবে জনগণের পাশে রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন এসিআই লজিস্টিকসের সুপারশপ স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির নাসির।

তিনি বলেন, সুপারশপগুলোর কাছ থেকে সরকার বছরে ৭০-৮০ কোটি টাকা ভ্যাট পায়।

এটা সরকার আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। অথচ বাইরের দোকানে এ ভ্যাট আদায় করা হয় না। ভ্যাট প্রত্যাহার করে নিলে আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য পণ্যকে আরো সহজলভ্য করতে পারবো।

সাব্বির নাসির বলেন, একটি নিদিষ্ট দামে আমরা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য কিনি।  স্বপ্নের কিছু আউটলেট রয়েছে, সেখানে আমরাই ভ্যাট দিয়ে দেই। কাস্টমার ভ্যাট দিতে চায় না। যখন ভ্যাট দিতে হবে না, তখন বিক্রয়মূল্য আরও কমিয়ে দিতে পারবো। অনেক কাস্টমার জানবে সুপারশপে ভ্যাট নেই। তবে এখনও কিন্তু আমরা অনেক প্যাকেজ অফার দেওয়ার ফলে ৫ শতাংশ ভ্যাটের কারণেও কাস্টমারের লাভ হচ্ছে। ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে গ্রাহকরাই আরো বেশি উপকৃত হবে। আরও বেশি কাস্টমারকে সেবা দিতে পারবো আমরা।  

তিনি বলেন, এখন আমরা যেটা নিয়ে আশঙ্কা করছি, সাধারণ ছুটি বেশিদিন স্থায়ী হলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা কাজ করতে পারবে না। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থনীতিতে মন্দাভাব তৈরি হবে। মানুষের চাহিদা বাড়বে। অর্থনীতিতে এ মন্দাভাব দূর করার জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি সুপারশপে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা। একইসঙ্গে নিত্যপণ্যের উৎপাদকদের ঋণের সুদহার কমিয়ে দিতে পারে সরকার। অথবা নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য রেশন কার্ড কিংবা ভর্তুকি দিতে পারে।

এই সংকটময় সময়ে কর্মীদের ধরে রাখাও একটি চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের কর্মীদের অনেকেই ভয়ে ছিলেন। তাদের অনেকের মধ্যেই ধারণা ছিল, অনেক পেশার মানুষই বাসায় বসে কাজ করছে। আমাদের কেন আসতে হচ্ছে! আমি তরুণ কর্মীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। যে আপনাদের দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। ওষুধ এবং নিত্য খাদ্যপণ্য নাহলে মানুষ কোথায় পাবে! মানুষের সেবা করার এরকম উত্তম সময় আপনারা আর পাবেন না। স্বপ্নের ৭৫-৮০ শতাংশ কর্মী কাজ করছেন। জনগণের পাশে আছেন। আমাদের সরবরাহকারীরাও আছেন। যেকারণে আমরা পণ্য সরবরাহ করতে পেরেছি। কারণ আমরা সরবরাহ করতে না পারলে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারতো। এ সময়ে যেসব কর্মীরা কাজ করছেন তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাইরেও দুপুরের খাবার, যাদের আবাসন সমস্যা রয়েছে, তাদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এসময়ে যারা কাজ করছেন তাদের অতিরিক্ত বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি।

নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সাব্বির নাসির বলেন, আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে তা মিল প্রসেস করে বিক্রি করি। একইভাবে আমাদের তত্ত্বাবধানে অন্যান্য পণ্যগুলোও (মাছ, সবজি, ফল) কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ কারণে আমরা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছি। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কেনার আরও একটি সুবিধা হলো, মধ্যস্বত্ত ভোগী না থাকায় আমরা দামটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারছি। আমরা মার্কেট লিডার হিসেবে বাকিদেরও এটা মেনে চলতে হয়। আন্তঃজেলা পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ না হলে খাদ্য দ্রব্য সংকটের কোনো সম্ভাবনা নেই।  

এখন স্বপ্নের আউটলেটগুলো জীবাণুমুক্ত রাখতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে স্বপ্নের আউটলেটগুলো কাস্টমার প্রবেশের আগে এবং পরে স্যানিটাইজ করা হয়। এছাড়াও একটি নিদিষ্ট সময় পর পর কর্মীদের স্যানিটাইজ করা হয়। স্বপ্নের কর্মীরা মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করছে। ব্যবহৃত গ্লাভসগুলো একঘণ্টা পর ফেলে দেওয়া হয়। আমরা কাস্টমারকেও মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে বলছি। আমাদের দেশে সবার মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করার মত সংস্কৃতি তৈরি হয়নি। তবে আমি বলবো জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। আউটলেটগুলোতে কাস্টমারদের অবস্থানের জন্য একটি নিদিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। যদিও অনেক সময়ই কাস্টমাররা মানতে চান না। রুলসগুলো আমরা মেনে চলার চেষ্টা করছি।

তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ আতঙ্কে অতিরিক্ত বেশকিছু পণ্য কিনে নিয়েছিল আউটব্রেকের পর থেকে গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত। এতে চাহিদা ও সরবরাহের গ্যাপ তৈরি হয়েছিল। আমরা এ সংকট কাটিয়ে উঠেছি। এখন যথেষ্ট পণ্য আছে। মানুষ যখন আতঙ্কিত হলো তখন আমাদের মধ্যে একধরনের চাপ তৈরি হলো। তখন আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দামটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছি। অনেক কাস্টমার অনেক বেশি পণ্য কেনায় আবার অনেক কাস্টমার পাচ্ছিলো না। তখন আমরা পণ্যের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছি। যেমন চাল সর্বোচ্চ ১০ কেজি, স্যানিটাইজার ১টা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২০
আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।