ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মৎস্য-প্রাণিসম্পদ খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সুপারিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২০
মৎস্য-প্রাণিসম্পদ খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সুপারিশ

ঢাকা: করোনা মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় আসন্ন বাজেটে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা করার সুপারিশ জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ডেভলপমেন্ট ফোরাম (বিডিডিএফ)। 

বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি ডেইরি খাতে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ১২ দফা দাবিসহ এ সুপারিশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম।

 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি লিটার তরল দুধ উৎপাদন হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ১০০-১২০ কোটি টাকা। কোভিড-১৯-এর ফলে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি খাতই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাত। ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে’র প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মাত্র দেড় মাসে দেশে কৃষকের লোকসান হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকারও বেশি। কারণ, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদিত পণ্যগুলো উচ্চপচনশীল এবং তা স্বল্প সময়ের মধ্যে বাজারজাত করতে হয়। কোভিড-১৯-এর ফলে খামারিরা তাদের উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাছাড়া খামারিরা নিজেদের গাভীগুলোকেও পর্যাপ্ত গো-খাদ্য সরবরাহ করতে পারছেন না, ফলে দেখা দিচ্ছে গবাদি প্রাণির নানাবিধ অসুখ ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। তাছাড়া বিপণন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলোও সক্ষমতা অনুযায়ী দুধ সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাত ও বিক্রি করতে পারছে না। দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলোর ভাষ্য মতে, তাদের বিক্রি বর্তমানের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। এমতাবস্থায় খামারিসহ সেক্টর সংশ্লিষ্ট সবার ক্ষতি ৪ হাজার কোটি টাকার মতো।
 
কোনো খামারের গো-খাদ্য বাবদ ৫০ শতাংশের বেশি খরচ হলে তা বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশে ডেইরি খামারের উৎপাদন খরচের শতকরা ৭০-৭৫ শতাংশ ব্যয় হয় গো-খাদ্য ক্রয়ে। এ জন্য খামারের অব্যবস্থাপনা, উন্নতজাতের গাভীর অভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে গো-খাদ্য মূলত আমদানি নির্ভর। গো-খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেটে কতিপয় খাদ্য উপাদান, যেমন-সয়াবিন অয়েল কেক (আরডি ৫%) এবং সয়াবিন প্রোটিন কনসেনট্রেট-এর (সিডি ১০%) আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে খামারের উৎপাদন অব্যহত রাখার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গো-খাদ্যে ভর্তুকি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষিখাতে ও বর্তমান বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু ডেইরিখাতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারিদের সুরক্ষায় গো-খাদ্যের ওপর ভর্তুকি দেওয়া আবশ্যক।
 
বাংলাদেশের ডেইরি শিল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো- আমদানিকৃত গুঁড়া দুধের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা। এসব গুঁড়া দুধ ভর্তুকি প্রাপ্ত হওয়ায় এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম, যার সঙ্গে বাংলাদেশের স্থানীয় উৎপাদন প্রতিযোগিতা করতে পারে না। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ গুঁড়া দুধের আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রায় ২৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে। বাংলাদেশে গুঁড়া দুধের আমদানি শুল্ক মাত্র ১০ শতাংশ। কিন্তু এশিয়ার অন্যান্য দেশে এর হার ৫০ শতাংশের ওপরে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ২.৫ কেজি প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। কিন্ত এই আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি প্রকৃত পক্ষে দেশের ডেইরির উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখবে না। এ ক্ষেত্রে বাল্ক ফিল্ড মিল্কের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশের ডেইরি সেক্টরের উন্নয়নের জন্য দেশীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২০ 
এমআইএস/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।