রোববার (২৮ জুন) এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এই ঘোষণা দেন।
পাটকলগুলোতে লোকসান হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা লোকসান নিয়ে পাটকল চালাতে পারি না।
মন্ত্রী বলেন, বিজেএমসি’র ক্রমবর্ধমান লোকসানের কারণে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রক্রিয়ায় অবসায়নের মাধ্যমে মিলগুলোকে বর্তমান দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযাযী আধুনিকায়ন করা হবে।
পাটমন্ত্রী বলেন, পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করে উৎপাদনমুখী করা হবে। তখন এসব শ্রমিক সেখানে চাকরি করার সুযোগ পাবেন।
তবে কবে সেই সুযোগ হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর আমরা কোনো লাভ করতে পারিনি, সব সময় লোকসান হচ্ছে। সে কারণে সরকার চিন্তা করেছে কীভাবে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকর মাধ্যমে কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করে এগিয়ে নিতে পারি। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের ক্ষতি না করে তাদের লাভবান করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
করোনার এই সময়য়ে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো- প্রশ্নে পাটমন্ত্রী বলেন, এই সিদ্ধান্ত ছয় মাস আগের। এই সময়ে তো তাদের টাকার প্রয়োজন হবে।
গোল্ডেন হ্যান্ডশেক হলো স্থায়ী শ্রমিককে মজুরি কমিশন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, পাটকলগুলোতে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের চাকরির অবসান করতে।
পাশাপাশি অবসরে যাওয়া শ্রমিকরাও লাভবান হবে বলে জানান সচিব।
তিনি জানান, ২০১৪ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত ৮ হাজার ৯৫৪ জন শ্রমিকের প্রাপ্য সকল বকেয়া, বর্তমানে কর্মরত ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিকের প্রাপ্য বকেয়া মজুরি, শ্রমিকদের পিএফ জমা, গ্রাচ্যুইটি এবং সেই সাথে গ্রাচ্যুইটির সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ হারে অবসায়ন সুবিধা একসাথে শতভাগ পরিশোধ করা হবে। এজন্য সরকারি বাজেট হতে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হবে।
পাট সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলোতে ২০১৩ থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৯৫৪ জন পাটকল শ্রমিক অবসরে গেছেন। অব্যাহত লোকসানের কারণে অর্থ সংকটে তাদের অবসর ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, এসব শ্রমিক গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের টাকা পাবে এবং তখন এসব শ্রমিক সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি করার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
সচিব বলেন, করোনা মহামারি না হলে এ বছর লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হতো। পাটখাতের যে সম্ভাবনা তা যদি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলে আগামী তিন-চার বছরে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার অর্জন করা সম্ভব হবে।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সময়যোপযোগী গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে এটাকে আরও উৎপাদনমুখী, কল্যাণকর ও জনবান্ধব করার পদক্ষেপ নিয়েছেন’, বলেন সচিব।
গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের বিরোধিতায় সারা দেশের ২৬টি পাটকলের শ্রমিকদের আন্দোলনের ঘোষণার মধ্যেই বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমিকদের অসবায়নের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
র্যাব মহাপরিচালক খুলনা থেকে এই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন। র্যাব মহাপরিচালক বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সরাসরি মন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। এরপর তিনি সবার সঙ্গে সভা করবেন।
খুলনায় র্যাব মহাপরিচালকের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ছাড়াও পাটকল শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২০
এমআইএইচ/এইচএডি/