অন্য বছরের মতো এবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনায় আগ্রহী ব্যাপারীদেরও খুব একটা দেখা নেই। এছাড়া ক্রেতার অভাবে হাটে নিয়েও গরু বিক্রি করা যাচ্ছে না।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনায় মোট ৬ হাজার ৮৯০ জন গবাদি পশুর খামারি রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি খামার আছে ডুমুরিয়া, তেরখাদা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায়। এসব খামারে মোট গবাদি পশু রয়েছে ৪৫ হাজার ১৪৮টি। এর মধ্যে ৪০ হাজার ৯৬৮টি গরু ও ৪ হাজার ১৮০টি ছাগল ও ভেড়া।
সূত্র জানায়, কোরবানির জন্য খুলনার খামারিদের মাধ্যমে নিরাপদ পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্ট করার কার্যক্রম সার্বক্ষণিক নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সুষম খাবার ও নিয়মিত কৃমিনাশকের ব্যবস্থাসহ পশুপালনের ক্ষেত্রে আরো যত্নবান হওয়ার জন্য খামারিদের সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে।
তবে খামারিরা বলছেন, গোখাদ্যের দাম বাড়ায় আমরা অন্য বছরের মতো এবার গরুকে তেমন বেশি খাবার দিতে পারিনি। যার কারণে অনেক গরু হৃষ্টপুষ্ট হয়নি।
অনেকে বলছেন, করোনার কারণে সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব চলছে। বিপাকে পড়ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যারা কয়েকজন মিলে (শেয়ার) কোরবানি দেন। করোনার কারণে এ শ্রেণি সবচেয়ে বিপাকে থাকায় অনেকেই চলতি বছর কোরবানি দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এতে কোরবানির পশু বিক্রি কমে যেতে পারে।
বুধবার (১ জুলাই) সকালে হতাশার কথা ব্যক্ত করে ডুমুরিয়ার খর্ণিয়া গ্রামের খামারি জাহিদ বলেন, এবার কোরবানিযোগ্য গরু নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে হাটের ওপর ভরসা করতে পারছি না।
এ সঙ্কটময় মুহূর্তে কেমন দাম পাবেন তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তিনি।
দাকোপের কৈলাশঞ্জের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অজয় মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার গরু কেনায় আগ্রহী কোনো ব্যাপারীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আমার কোরবানিযোগ্য ১০টি গরু রয়েছে। যার প্রত্যেকটির ১ লাখ ১০ হাজার টাকা করে দাম হবে।
তিনি আরও বলেন, এবারের কোরবানির হাটে ক্রেতার অভাবে কম দামে গরু বিক্রি করতে হতে পারে।
লবণচরার সাচিবুনিয়ার খামারি আলতাফ বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভালো নয়। যার কারণে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে চিন্তায় আছি। আমার ১২টি দেশি গরু রয়েছে। যার মধ্যে কোরবানিযোগ্য ৫টি। এবছর ব্যাপারীরা অনেক কম আসছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোরবানি সামনে রেখে ব্যস্ত খুলনার গবাদিপশুর খামার মালিকরা। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবারের ওপর নির্ভর করে পশুগুলোকে কোরবানির উপযুক্ত করে গড়ে তুলছেন তারা।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসএম আউয়াল হক বাংলানিউজকে বলেন, এদেশের ধর্মভীরু মানুষ ঠিকই কোরবানি দেবেন। যার কারণে কোরবানির পশুও বিক্রি হবে। খামারিদের খুব বেশি হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এবার করোনার কারণে পশুরহাটে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচা-কেনা হবে। এছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রি এখন ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরাও চেষ্টা করছি অনলাইনে খামারিদের গরু বিক্রিতে সহযোগিতার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২০
এমআরএম/এএ