শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকালে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, করোনার আতঙ্কের কারণে বাইরেই তো নামা হচ্ছে কম। ফলের দাম কম দিয়ে আর কি হবে।
কদমতলা আড়তের ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন কম। স্বাভাবিক খাবারের বাইরে অন্য কোন ফলও কিনছেন কম। যার কারণে বিক্রেতাদের অনেক ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা এখন খুবই মন্দা। ফল পচনশীল হওয়ায় দ্রুত বিক্রি করা না গেলে নষ্ট হয়ে যায়।
তারা আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ নিয়ম মানতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি জাতীয় ফল কমলা, মাল্টা ও লেবু খাচ্ছেন লোকজন, আর এতেই এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে ব্যাপকভাবে। তবে কমেছে আম, কাঁঠালের বিক্রি।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, এতোদিন শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় রেড জোনের লকডাউন ছিলো। ওই এলাকার সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। যে কারণে ভ্রাম্যমাণ কোন ফল বিক্রেতা ওইসব এলাকায় ডুকতে পারেনি। এছাড়া কারোনার ভয়ে মানুষ খুব বের হন না। এ কারণে ফলের বাজারগুলোতে ক্রেতা সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। এতে কমে গেছে ব্যবসায়ীদের ফল বিক্রি।
আল-মদিনা ফল ভান্ডারের মালিক কামাল হোসেন তোতা অভিযোগ করে বলেন, শহরের ভেতরে পুলিশ ভ্যানে করে কোন ফল বিক্রি করতে দিচ্ছে না। ১৪০-৫০টি খুচরা ফল ব্যবসায়ীর ভ্যান আটকা রয়েছে থানায়। যে কারণে আড়তের ফল বিক্রিও কমে গেছে। বিক্রি কম হওয়ায় আড়তে ফল রাখাও কমিয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
আশা বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক আবুল হাসান বলেন, এবার আমের দাম গতবছরের থেকে বেশ কম। ব্যাপারীরা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও দিনাজপুর থেকে আম আনেন। আম্রুপালির পাইকারি দাম প্রতিমণ ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজি পড়ে ৪৫ টাকা করে। হাড়িভাঙা ২২০০ টাকা করে মণ, কেজি পড়ে ৫৫ টাকা। ফজলি ১২০০ টাকা মণ, কেজি পড়ে ৩০ টাকা। লখনা ১৪০০ করে মণ, কেজি ৩৫ টাকা। অথচ গতবছর এ আম প্রতিকেজিতে ২০টাকা বেশি ছিলো।
খুলনার ফল আমদানিকারক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির বলেন, মহানগরীর কদমতলা ফলের আড়তে ৫০টি দোকান রয়েছে। যেখান থেকে খুলনাঞ্চলে ফল যায়। এবার করোনায় সব হিসেব যেন পাল্টে গেছে। পাইকারি আড়ত থেকে শুরু করে খুচরা পর্যায়ে খুব বেশি চাহিদা নেই ক্রেতার। করোনার ভয়ে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে কম বের হন। কিছু মানুষের কাজ নেই, অনেকেই বেতন পাচ্ছেন না ঠিকমতো। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস খেতে কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দিয়েছে অনেকে। যে কারণে খুচরা বিক্রেতারাও পাইকারি বাজার থেকে ফল কম কিনছেন। পাইকারি আড়তগুলোতে সরবরাহও কম।
তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে ফলের বাজারে এবার চিত্র ভিন্ন। পাইকারি পর্যায়ে সরবরাহ কম, ক্রেতা ও দামও কম। জীবাণুর ভয় এবং অর্থ সঙ্কট দুই মিলেই কমেছে ক্রেতা। সার্বিকভাবে ভাল নেই ফল ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২০
এমআরএম/ওএইচ/