ঠাকুরগাঁও: ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র দু’দিন। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় এখনো গরু বিক্রি করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন ঠাকুরগাঁও জেলার অনেক খামারি।
কারণ ছয় থেকে সাত মাস গরু লালন পালন করতে যে খরচ তাদের হয়েছে, সে দামও দিতে চাচ্ছে না ক্রেতারা। ফলে অনেকে এখনো গরু বিক্রি করেননি। গরু কম দামে বিক্রি করলে যেমন খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি বিক্রি না করতে পারলেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান খামারিরা। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বাইরে থেকে ক্রেতা না আসায় গরুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে জানান গরু বিক্রেতারা।
গরু বিক্রেতা রতন বলেন, এবার গরু লালন পালন করতে যে খরচ হয়েছে, সে হিসেবে দাম পাচ্ছি না। কারণ দুই মাস টানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে গরুর খাবার খড়, কাঁচা ঘাস, ফিট, চালের খুদ ও ভুষির দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে গরুর সন্তোষজনক দাম পাওয়া যাচ্ছে না। যদি এ ঈদে গরুগুলো বিক্রি না করি, হয়তো ভবিষ্যতে করোনা ভাইরাস আর চলতি বন্যার কারণে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই সীমিত লাভে আমাদের গরু বিক্রি করতে হচ্ছে।
গরু বিক্রেতা তৈমুর বলেন, আমি এবার ছোট্ট পরিসরে কোরবানির জন্য সাতটি গরু কিনেছিলাম প্রতিটি গরুর মূল্য ছিল ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। ছয় মাস লালন পালন করতে একেকটি গরুর পেছনে খরচ হয় চার থেকে ছয় হাজার টাকা। ৫০ হাজারের গরুটি বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার, আর ৬০ হাজারের গরুটি বিক্রি করতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায়।
বিক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, এখানে গরু প্রতি টোল ২৩০ টাকা হলেও ইজারাদার আদায় করছেন ৩০০ টাকা। আর ছাগল প্রতি টোল ৯০ টাকার স্থলে ১৩০ টাকা আদায় করছে। ক্রেতাদের দিতে হয় ২৫০ টাকা। ক্রেতা-বিক্রেতা মিলে ৩১০ টাকা টোল দিতে হয়।
এ ব্যাপারে হাটের ইজারাদার পীরগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী গোলাম আজম বলেন, হাটে ইজারা সরকারি দর থেকে বেশি নেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনসহ সবাই অবগত। এটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া হাটে আসা ক্রেতা সালে আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, গত মাসে একটি গরু কিনে রশিদ করতে দিতে হয়েছিল ২৫০ টাকা। আর এখন একটি গরু কিনতে এসে দিতে হলো ৩০০ টাকা। গতবার দিয়েছিলাম ২০ টাকা বেশি, এবার দিলাম পুরো ৭০ টাকা বেশি। সব জায়গায় ডাকাতি!
আমিনুল হক নামে এক ক্রেতা বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে অভাবের মধ্যে মানুষের দিন যাচ্ছে। তাই এবার অনেকে গরুর বদলে নিজের সামর্থ্য মত ছাগল নিচ্ছেন। তবে এবার গরুর থেকে ছাগলের দাম বেশি।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন বলেন, কোরবানির ১৫ দিন আগ থেকে গরুর হাটগুলোতে আমাদের মেডিকেল টিম কাজ করছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাটে এমন অনিয়ম হলে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
এসআই