রাজশাহী: রাত পোহালেই ঈদ। আগামী শনিবার (১ আগস্ট) ঈদুল আজহা।
আজ কেবল দরদাম নয়, পশু কিনতেই হবে। তাই সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরবানির জন্য হাটের সেরা পশুটিই কিনতে চাইছেন সবাই।
শুক্রবার সকাল থেকেই পশুরহাটে ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে ভিড় ততই বাড়ছে। দুপুরে যেন জনস্রোত তৈরি হয়েছে শেষ সময়ের পশুরহাটে। তবে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই! করোনাকালের মধ্যেও হাটের চিত্র অন্য সময়ের মতোই। যেন ঈদের খুশিতে সবকিছু ভুলে গেছে সবাই। পশু কেনাবেচা আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের এক একটি শব্দে গমগম করছে পশুরহাট।
শেষ মুহূর্তের কোরবানির হাটে পশু ও ক্রেতা দুইই বেড়েছে। ফলে হাসি ফুটেছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মুখে। রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও শহরের কাছে হওয়ায় সিটি হাটেই ছুটছেন ক্রেতারা। সকাল থেকেই তাই কেনাকাটায় সরগরম হয়ে উঠেছে সিটি হাট। গরু আর খাসির আমদানিও হয়েছে প্রচুর।
তবে শেষ সময়ে পিছিয়ে নেই মহানগরের উপকণ্ঠে থাকা কাটাখালির মাসকাটা দীঘি, গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি, তানোরের চৌবাড়িয়া, পুঠিয়ার বানেশ্বরের পশুরহাটও। কোরবানির পশু কেনাবেচা নিয়ে সমানতালে ব্যস্ততা বেড়েছে এগুলোতে।
রাজশাহীর সিটি হাটে গিয়ে দেখা যায়, ভারতীয় গরু তেমন নেই। এ পশুরহাটের অধিপত্যে রয়েছে দেশি গরু। তবে বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর কাছেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি। হাটে বড় গরুর চেয়ে মাঝারি গরুর কদর বেশি। দুপুরের দিক থেকে দামও কমতে শুরু করেছে। খেই ধরে না রেখে অল্প লাভ হলেও সামান্য দর-দামেই এখন নিজের পশুটি ছেড়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
শেষ সময়ে ক্রেতারাও এ সুযোগ হাতছাড়া করছেন না। ফলে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম সিটি পশুরহাট জমজমাট হয়ে উঠছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষই চেষ্টা করছেন কীভাবে আরও কম দামে গরু-ছাগল পাওয়া যায়। আর একটু কম দাম হলেও তা বিক্রি করে কীভাবে ঈদের আগেই হাট থেকে বাড়িতে ফিরে যাওয়া যায়।
সিটি হাট কমিটি ও ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুক্রবারই মূলত পশুরহাট জমেছে। এরমধ্যে আজই লোক বেশি এবং অন্যদিনের তুলনায় দামও একটু কম। সকালে আশপাশ থেকে হাটে গরু, ছাগল ও মহিষ আসছে। দুপুর ১২টা গড়াতেই কোরবানির গরুতে হাট ভরে গেছে। এখন চলছে দর কষাকষি ও পশু বেচাকেনা। চাঁদ রাত হওয়ায় রাত পর্যন্তই চলবে বেচাকেনা।
রাজশাহী মহানগরের শলাবাগান এলাকার রেজাউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দুপুরেই হাটে এসেছেন। তবে হাটে প্রচুর মানুষের সমাগম। কোনো স্বাস্থ্যবিধি নেই। মানুষ আর পশুর মাথা গোনা মুশকিল। সবাই ভিড় ঠেলে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। আজ সরবরাহ বেশি। দাম অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা কম। তাই দুপুর গড়াতেই দরদাম করে ৭০ হাজার ৫০০ টাকায় একটি মাঝারি আকৃতির গরু কিনেছেন। তবে এ দাম গতবারের চেয়ে বেশি বলেও উল্লেখ করেন কোরবানির গরু কিনতে আসা এ ক্রেতা।
তিনি বলেন, বড় গরুর দাম আরও চড়া। তাই হাটে দেশি মাঝারি ও ছোট আকারের গরুর চাহিদা বেশি। আজ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মধ্যে ছোট আকারের (৬০-৭০ কেজি) গরু পাওয়া যাচ্ছে। বড় আকৃতির গরু ৮০ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকারও ওপরে দাম হাঁকা হচ্ছে।
এছাড়া ছাগলের দামও আজ কম বলে জানান পবার পারিলা থেকে আসা খামারি আশরাফুল। তিনি বলেন, শেষ মুহূর্তে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের ছাগলের দাম ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১৪ থেকে ১৮ কেজি ওজনের ছাগল ১০ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা ও বড় আকৃতির ছাগল ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহীর পবার দামকুড়া থেকে সিটি হাটে আসা রফিকুল ইসলাম জানান, সাতটি গরু নিয়ে এসেছেন। সকালেই ৯০ হাজার ৮০০ টাকায় তার সবচেয়ে বড় গরুটি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকিগুলোর দাম হাঁকছেন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যেই। এ কোরবানির মৌসুম শুরুর পর আজই একটু কম দাম চাচ্ছেন বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী।
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, এবার ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। হাটে দেশি গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর শেষ সময়ে ক্রেতাও বেশি। ব্যবসায়ীরাও দাম কমাতে শুরু করেছেন। প্রথম দিকে চড়া দাম হাঁকলেও আজ বেশি দর কষাকষি করছেন না। মোটামুটি দাম উঠলেই খামারিরা পশু ছেড়ে দিচ্ছেন। ঈদের আগ মুহূর্তে তাই সবাই সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী গরু কিনতে পারছেন। শেষ সময়ে হাটের সার্বিক নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। তবে এত মানুষের মধ্যে কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলানো যাচ্ছে না বলে অপারগতার কথা জানান রাজশাহী সিটি হাটের এ ইজারাদার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২০
এসএস/আরবি/