খুলনা: এবারও ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর চামড়ার মান ও আকার ভেদে বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে বলে জানান শহীদ শেখ আবু নাসের দাখিল মাদরাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের শিক্ষক খান জাহান।
রোববার (২ আগস্ট) তিনি জানান, তার মাদরাসার এতিমখানার জন্য গরুর চামড়া ১৫৯টি ও ছাগলের ৫৭টি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। যা ফুলতলার সুপার লেদারে বিক্রি করা হয়েছে।
খান জাহান বলেন, অনেক মাদরাসা ও এতিমখানার অর্থের বড় একটি অংশ আসে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে। অনেকে তাদের জবাই করা পশুর চামড়া বিনামূল্যে মাদরাসা এবং এতিমখানায় দান করেন। সেসব চামড়া বিক্রির মাধ্যমে মাদরাসাগুলো অর্থ উপার্জন করে। এবার চামড়ার দাম নিম্নগামী হওয়ায় মাদরাসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তার মতো রূপসার একটি মাদরাসার শিক্ষক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, কোরবানির চামড়ার দাম এবার খুবই কম। চামড়ার দাম এতিমখানা, মাদরাসা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীই পেয়ে থাকে। তিন-চার বছর আগে চামড়া তিন হাজার থেকে ৩২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর ৫০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এবার তার থেকেও খারাপ অবস্থা।
তাদের মতো চামড়া সংগ্রহকারী অনেকে জানান, অসংখ্য মক্তব, মাদরাসা, এতিমখানার আয়ের অন্যতম উৎস কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকা। এবার চামড়ার মূল্য সর্বনিম্ন। বলতে গেলে সংগ্রহ করতে যা ব্যয় হচ্ছে, চামড়া বিক্রি করে তা উঠছে না। চামড়া ব্যবসায়ীরা নামমাত্র মূল্য দিয়ে গরিবের হক নিয়ে যাচ্ছেন। খুলনায় কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দামে এবারও ধস নেমেছে। পানির দামেই কোরবানির পশুর চামড়া কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত দামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঈদের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন কম টাকায় চামড়া কেনা-বেচা হচ্ছে।
খুলনার শেখপাড়া চামড়া পট্টিতে কোনবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে আসা অনেকে অভিযোগ করেন, দাম নির্ধারণ ও রপ্তানির ঘোষণা দেওয়ার পরও কোরবানির পশুর চামড়ার দামের বিপর্যয় ঠেকানো গেল না। খুলনায় গরুর চামড়া আকার ভেদে ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একেকটি ছাগলের চামড়ার দাম ১০-২০ টাকা।
বিভিন্ন মাদরাসায় দান করা চামড়া বিক্রি করতে হতাশায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে কওমি মাদরাসা ও এতিমখানার ছাত্র-শিক্ষকরা কোরবানির ঈদের আনন্দ বাদ দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এ বছর চামড়ার দাম যে হারে পাওয়া যাচ্ছে, তাতে চামড়া সংগ্রহের যাতায়াত ব্যয় উঠানো কঠিন হচ্ছে।
শেখপাড়া চামড়া পট্টির আমান লেদার কমপ্লেক্সের মালিক আমানুল্লাহ আমান বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে আগের বকেয়া টাকা না পাওয়ায় আমরা নিজেরাই রয়েছি চরম বিপর্যয়ের মধ্যে। ট্যানারিতে গত বছরের চামড়া এখনও মজুদ রয়েছে। তাই ট্যানারিতে চামড়া নেওয়ার আগ্রহ কম। এর সঙ্গে আছে করোনার প্রভাব। সব মিলিয়ে এবার চামড়ার বাজার গত বছরের চেয়েও অনেক খারাপ।
ইয়াসিন লেদারের মো. আবু জাফর বলেন, ট্যানারি মালিকরা বিগত বছরের টাকাই এখনও পরিশোধ করেননি। যে কারণে ব্যবসায়ীরা সংকটের মধ্যে রয়েছেন। এবার ১৮-২০ বর্গফুটের চামড়া ১০০ টাকা ও ৩০-৩২ বর্গ ফুট চামড়ার দাম ৫০০ টাকা। গত বছর এ চামড়া ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দাম ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২০
এমআরএম/এসআই