ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রথমবার গভীর সমুদ্রে চোখ, টুনা ধরতে ব্যয় ৬১ কোটি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২০
প্রথমবার গভীর সমুদ্রে চোখ, টুনা ধরতে ব্যয় ৬১ কোটি ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: দেশে বর্তমানে উৎপাদিত মাছের পরিমাণ ৪২.৭৭ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ মাছ মোট ৩৬.২২ লাখ মেট্রিক টন ও উপকূলীয় সামুদ্রিক মাছ ৬.৫৫ লাখ মেট্রিক টন।

তবে সমুদ্রে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে গভীর সমুদ্র থেকে টুনা মাছ সংগ্রহ করা হয় না।  

বর্তমানে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনামের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। গভীর সমুদ্র থেকে টুনা মাছ আহরণ করলে বাংলাদেশের অবস্থান আরো উপরে উঠে যাবে।  

মিয়ানমার ও ভারতের দখল থেকে মুক্ত হয়ে মোট এক লাখ ৩১ হাজার ৯৮ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। নীল জলরাশির তেল, গ্যাস, মাছসহ প্রয়োজনীয় সম্পদ রক্ষা ও এর আহরণে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করার লক্ষ্যে সৎ ও দক্ষ জনবল গড়তে চায় সরকার। এর ধারাবাহিকতায় প্রথমেই গভীর সমুদ্র থেকে টুনা মাছ সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

দেশে মাছ উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়াতে কয়েকটি ভ্যাসেল কেনার পরিকল্পনা করছে মৎস্য অধিদপ্তর। এর মাধ্যমে গভীর সমুদ্র থেকে বেশি পরিমাণে টুনা মাছ আহরণ করা হবে। ‘গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্প’ হাতে নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ৬১ কোটি ৬ লাখ টাকা।  

মঙ্গলবার(১৮ আগস্ট) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে।  অনুমোদন পেলে চলতি মাস থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় গভীর সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় টুনা ও সমজাতীয় মাছের প্রাপ্যতা যাচাই ও আহরণে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হবে। এছাড়া গভীর সমুদ্রে অনাহরিত টুনা ও সমজাতীয় মাছ আহরণের মাধ্যমে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা এর লক্ষ্য। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হবে।
 
গভীর সমুদ্রে টুনা ধরতে তিনটি লং লাইনার প্রকৃতির ফিশিং ভ্যাসেল কেনা হবে। এছাড়াও ভ্যাসেল পরিচালনা করতে দেশি-বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। এছাড়া টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মৎস্য আহরণ, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি, ক্রুসহ টুনা আহরণে নিয়োজিত ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ এবং ৩৭ জন দেশীয় ও সাতজন আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ করা হবে।
 
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মোহাম্মদ জাকির হোসেন আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিশাল সমুদ্র জয় করেছি। এটাকে কাজে লাগাতে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ ধরতে একটা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি আগামী একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। ’

সূত্র জানায়, দেশে মোট উৎপাদিত মাছের মধ্যে চাষকৃত মাছের পরিমাণ ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে পুকুরে সব থেকে বেশি ১৯ লাখ মেট্রিক টন মাছ চাষ হয়। এরপরই প্লাবনভূমি থেকে উৎপাদিত মাছ রয়েছে সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া নদীর মোহনায় ৩.২১, সুন্দরবনে ০.১৮, বিলে ১, কাপ্তাই লেকে ০.১০,  মৌসুমি মাছ চাষ ২.১৬ ও চিংড়ি ঘেরে আড়াই লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা হয়েছে। এর বাইরে উপকূলীয় এলাকায় ৫.২৯ মেট্রিক টন মাছ চাষ হয়েছে।  

এছাড়া বাওড়, হাওর, খাঁচা ও পেন কালচারে মাছ চাষ বাড়ছে। তবে গভীর সমুদ্র থেকে টুনা আহরণ নেই। গভীর সমুদ্রের মৎস্যসম্পদ আহরণে বেসরকারি খাতকে দ্রুত যুক্ত করতে চায় সরকার।

আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে মৎস্য আহরণের আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে নতুন নতুন মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তলদেশীয় ও ভাসমান মৎস্য আহরণের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রায়তন মৎস্য সেক্টরের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণ প্রধানত সাগরের অগভীর অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রেই মৎস্য সংরক্ষণ আইন সঠিকভাবে প্রতিপালন করা হয় না। এছাড়া আধুনিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারের মাধ্যমে মৎস্য আহরণ চারটি ফিশিং গ্রাউন্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।  

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারি উদ্যোগে নতুন ফিশিং গ্রাউন্ড চিহ্নিতকরণসহ আন্তর্জাতিক বাজারে অধিক চাহিদাসম্পন্ন এবং মূল্যবান প্রজাতির টুনা মাছ আহরণে দক্ষতা অর্জন করতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে দ্রুত সম্পৃক্ত করা হবে। দেশে ও বিদেশে টুনা মাছের অনেক চাহিদা। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক অর্থ আয় করা সম্ভব।

এ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ)  রমজান আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সামনে দেশে মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা হবে। এ জন্য আমরা বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছি। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ মাছ উৎপাদনের পরিমাণ বেশি। সামুদ্রিক মাছ বলতে উপকূলীয় এলাকা থেকে উৎপাদিত মাছ। ’  

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন গভীর সমুদ্রে থেকে সরকারিভাবে টুনা মাছ আহরণে ব্যাপারে ভাবছি। এতে করে দেশে মোট মাছ উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়বে। এ জন্য  ভ্যাসেলও কেনা হবে। ভ্যাসেল কেনার পরেই আমরা গভীর সমু্দ্র থেকে টুনা মাছ ধরবো। আহরণ না থাকায় টুনা মাছ অনেক দামি। সাধারণ মানুষ খেতে পারেন না। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইলিশের মতো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেবো সুস্বাদু টুনা মাছ। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২০
এমআইএস/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।