ঢাকা: এসএমই উদ্যোক্তাদের করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেওয়াটাই হবে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, প্রতিকূল অবস্থায় কীভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে নীতিমালা ও পদ্ধতিসমূহকে পুনরায় সাজানো প্রয়োজন।
সোমবার (১৭ আগস্ট) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ‘কোভিড-১৯ সময়কালীন এসএমই: প্রতিক্রিয়া, পুনরুদ্ধার ও সহনশীলতা’ শীর্ষক একটি নীতি নির্ধারণী সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোশতাক হাসান বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়াটাই হবে করোনায় তাদের ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা থেকে কাটিয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে এ খাতের উন্নয়নে পর্যাপ্ত অর্থায়ন হলে এ খাত এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোরও উচিত এসময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ পাওয়ার বিষয়টি সহজ করে দেওয়া।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ফাউন্ডেশনের (এসএমইএফ) ম্যানেজিং ডিরেক্টর শফিকুল ইসলাম এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই প্ল্যাটফর্মে এনে অনলাইনে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত করার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে মতামত দেন।
তিনি বলেন, সামাজিক ক্যাম্পেইন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের স্থানীয় পণ্যের ব্যবসায়িক পরিধি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। একইসঙ্গে প্রতিকূল অবস্থায় কীভাবে কাজ করা হবে এ বিষয়ে আরও নীতিমালা তৈরি করা দরকার।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, সরকারের উচিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের একটি ‘পুনরুদ্ধার ফান্ড’ গঠন করা, কেননা তারা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখে। একইসঙ্গে উদ্যোক্তাদের উচিত ছোট ছাতার অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে তাদের পরিসরকে আরও বৃহৎভাবে সাজানো, ডিজিটাল সুযোগগুলো কাজে লাগানো এবং তাদের যোগ্যতাকে আরও উন্নত করা। পাশাপাশি নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) প্রেসিডেন্ট নুরুল গণি শোভন কীভাবে নতুন উদ্যোক্তারা প্রতিকূল পরিবেশেও ব্যাণিজ্যিক কার্যক্রম করতে পারে এ বিষয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন স্কিম ও সুযোগ-সুবিধা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এছাড়া দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, যাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয় এবং তারা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারে।
বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট আবদুর রাজ্জাক মনে করেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের করোনা সংকটে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সরকারের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের প্রয়োজন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করা। একইসঙ্গে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা যাতে করে উদ্যোক্তারা সংকট কাটিয়ে উঠতে সবধরনের সহযোগিতা পায় এ বিষয়ে মৌলিক পদক্ষেপ নেওয়া।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে এটুআইয়ের হেড অব ফিউচার অব ওয়ার্ক ল্যাব আসাদ-উজ-জামান করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা কী ধরনের প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন, কর্মহীন হয়ে যাওয়া, দক্ষতা সংকট কাটিয়ে কীভাবে কর্মীরা নতুন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে নিজেদের উপযোগী করার চেষ্টা করছে এ বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোশতাক হাসান। এটুআই-এর যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) সেলিনা পারভেজের সভাপতিত্বে এবং এটুআইয়ের পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অনলাইন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমইএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গণি শোভন এবং বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২০
জিসিজি/আরবি/