বরিশাল: বরিশালের সব উপজেলাতেই কম বেশি সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের আবাদ হয়ে থাকে। ফলনের ওপর নির্ভর করে কখনো সোনালি আঁশের উৎপাদন বেশি, আবার কখনো কম হয়ে থাকে।
কৃষকরা বলছেন, লাভ-লোকসান মিলিয়েই তাদের জীবন-সংসার এগিয়ে নিতে হয়ে, সেই হিসেবে শুকনোর সময়টাতে ক্ষেতে ধান আর পানির সময়টাতে পাট চাষ করে একেবারে খারাপ নেই তারা।
যদিও এবারে বরিশাল অঞ্চলে ফসলি ক্ষেতে আগাম পানি চলে পাট গাছ বড় না হতে পেরে সোনালি আঁশের উৎপাদন কম হয়েছে, তবে বিগত বছরের থেকে দর ভালো পাওয়ায় বেশ খুশিই রয়েছেন কৃষকরা।
তাদের দাবি, পুরাতন নয়, নতুন এবং ভালো জাতের পাটের বীজ চাষিদের মধ্যে বিতরণ বা সংগ্রহ করার জন্য কৃষি বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। যাতে রোপণের পর চাষিরা বিপাকে না পড়েন, তাহলেই পাট চাষে আগ্রহী হবেন তারা। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা এলাকার বাসিন্দা ও পাট চাষি আব্দুল খালেক হাওলাদার জানান, মূলত পাটের বীজ নতুন না পুরাতন সেটা বোঝার উপায় নেই। স্থানীয় বাজারে যে বীজ সংগ্রহ করা হয়, তা লাগানোর আগে তো দোকানিরা নতুনই বলেন। কিন্তু অনেক চাষি লাগানোর পর যখন পাটগাছগুলো লম্বা না হয় তখন বুঝতে পারেন যে এটা পুরাতন বীজের ছিলো। লম্বা না হওয়ার পেছনে যদিও আরও একটি কারণ এ অঞ্চলে রয়েছে, আগাম ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়া।
তিনি বলেন, এবারে বরিশাল অঞ্চলে অনেক পাট ক্ষেত আগাম বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পাট গাছগুলো সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি এবং পর্যাপ্ত লম্বা হয়নি। এতে সোনালি আঁশের উৎপাদনও কম হয়েছে। যদিও এবারে বাজার দর ভালো বলে জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানে গেলো বার মণপ্রতি পাটের আঁশ ১২শ টাকায় বিক্রি করেছি, সেখানে এবারে ১৫ থেকে ১৬শ টাকা করে দর পাচ্ছি।
একই এলাকার বাসিন্দা জাহানার বেগম বলেন, পাট আবাদ থেকে উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঘরের নারীরা। প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি তার স্বামীকে পাট আবাদে সহায়তা করছেন। লাভ-লোকসানের মধ্যেই পাট চাষ করছেন প্রতিবছর। এ বছর তারা ২৪ শতাংশ জমির ওপর মেস্তা ও ১৪ শতাংশ জমির ওপর বগী (তোষা) পাটের আবাদ করেছেন। বর্ষায় নিচু জমিতে পানি উঠে যাওয়ায় মেস্তা পাটগুলো তেমন একটা লম্বা হয়নি, আর উচু জমির বগী পাটগুলো ভালোই লম্বা হয়েছে। তিনি জানান, গেলো ২ সপ্তাহ ধরে তারা পাট তুলছেন। প্রথমে পাটগুলোকে কেটে পানিতে জাগ দিচ্ছেন। এ কাজগুলো ঘরের পুরুষরা করলেও গাছ থেকে পাটের আশ ছাড়ানোর কাজটি তিনি করছেন। করোনার কারণে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবারে তাদের ৪ ছেলে-মেয়ে এ কাজে সহায়তাও করছেন। আর শুরুতেই দর ভালো থাকায় এবারে শ্রম স্বার্থক হবে বলে আশা জাহানারা বেগমের।
এদিকে এবারে ভালো দর পেয়ে খুশি গ্রামের অন্য পাটচাষি শাহিন ব্যাপারি, মালেক হাওলাদার ও জাহাঙ্গীর হাওলাদার জানান, ভালো মানের বীজ পেলে উৎপাদন ভালো হয়। এক্ষেত্রে বীজ সংগ্রহকারীদের দিকে কৃষি দপ্তরের নজর থাকা উচিত। ভালো বীজ, ভালো উৎপাদনের পর দর কিছুটা কম পেলেও লোকসান হয় না। কিন্তু উৎপাদন কম আর দরও কম হলে চাষিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অপরদিকে এ অঞ্চলে শুধু পাটের আঁশই বিক্রি হয়, পাটের কাঠি কৃষক নিজেই জ্বালানি হিসেবে রেখে দেন বলে জানিয়ে চাষিরা জানান, পাটকাঠি কোনো চাষিই বিক্রি করতে চান না। কারণ প্রতিমুঠি পাটকাঠিতে যে দাম পাওয়া যায় তার থেকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার নয়তো, রান্না ঘর-গোয়ালঘরের ব্যারা হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তবে পাটকাঠি পানবরজেও ব্যবহৃত হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বরিশাল জেলায় ১৩ হাজার ৯৫৭ হেক্টর জমিতে দেশী, তোষা, মেস্তা ও শন পাটের আবাদ হয়েছে। যারমধ্যে জেলায় সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে মেস্তা এবং জেলার মধ্যে শুধুমাত্র গৌরনদী উপজেলায় মাত্র ৩ হেক্টর জমিতে শন পাট আবাদ করা হয়েছে।
অপরদিকে গোটা জেলার মধ্যে মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জ সবথেকে বেশি এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলায় সবথেকে কম পাটের চাষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২০
এমএস/এএটি