বেনাপোল (যশোর): দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে গেলো অর্থবছরের তুলানায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি পণ্য ঘাটতি হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৫৯ মেট্রিক টন ও রপ্তানি পণ্য ঘাটতি হয়েছে ৮৪ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন। এসময় আমদানি করা পণ্যে বিগত অর্থবছরের তুলনায় এবার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এদিকে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারত থেকে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মেট্রিক পণ্য আমদানি হয়েছে এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে আমদানি হয়েছিলো ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ মেট্রিক। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিলো ৪ লাখ ১ হাজার ১৭৭ মেট্রিক টন। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত থেকে পণ্য আমদানির ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বন্দর থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।
শুক্রবার (২১ আগস্ট) বিকেলে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল আমদানি-রপ্তানি পণ্যের পরিসংখ্যনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এরই মধ্যে বন্দরে বেশকিছু উন্নয়ন কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তাছাড়া বন্দরের চারপাশে সিসি ক্যামেরা, প্রাচীর নির্মাণ নতুন জায়গাসহ বেশকিছু কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এসব কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে ব্যবসায়ীদের আর কোনো অভিযোগ থাকবে না এবং বাণিজ্যে গতি ফিরবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সুজন জানান, দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যের বেশিরভাগ পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার।
তিনি আরও জানান, এ বন্দরে আমদানি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই খোলা আকাশের নিচে রোদে পুুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এসব পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করছেন। ফলে কাঙ্খিত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব হবে।
বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে আমদানির চাহিদা বেশি। তবে বর্তমানে বন্দরের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের সমস্যার কারণে এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বন্দরে আমদানি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষণে ভালো ব্যবস্থা না থাকায় সময় মতো পণ্য খালাস করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আটকে থাকা পণ্যে যেমন লোকসানে পড়ছেন, তেমনি পণ্যের গুণগতমানও নষ্ট হচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা জানান, বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে স্বল্প পরিসরে বাংলাদেশ স্ট্যার্ন্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) একটি শাখা চালু করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদসহ (বিসিএসআইআর) অন্য প্রতিষ্ঠানের শাখাও যাতে দ্রুত স্থাপন করা হয় তা লিখিতভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া এ বন্দরে রাজস্ব আয়ে গতি ফেরাতে কাস্টমস কর্মকর্তারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে রেলে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হওয়ায় বাণিজ্যে গতি ফিরেছে। দিনের দিন পণ্য খালাস হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, যারা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য ও ভায়াগ্রার মতো মাদক আমদানি করছে তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাতে কোনোভাবে এ ধরনের মাদক শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাস না হয়, সেদিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২০
ওএইচ/