ঢাকা: ওয়ার্ল্ড ইনেভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২০-এর তথ্য মতে, করোনার কারণে ২০২০ সালে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ৪০ শতাংশ কমে গিয়ে ১ দশমিক ৫৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়াতে পারে। ফলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে করোনা পরবর্তী সময়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যেতে পারে।
ভিয়েতনামসহ আরও কয়েকটি দেশ নিজে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে চায়। এ সময়ে এফডিআই আকর্ষণে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে বলে মতামত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
শনিবার (২২ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের গতিপ্রবাহে কোভিড-১৯ এর প্রভাব: সমস্যা ও উত্তরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব মন্তব্য করেন তারা।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, হ্রাসকৃত করের হার বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করে, তবে আমাদের দেশে কর-জিডিপি’র আনুপাতিক হার এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিদ্যমান করদাতাদের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা খোঁজার ওপর তিনি মত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, এসইজেড অঞ্চলে খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতে বিনিয়োগ করলে উদ্যোক্তারা ২০ শতাংশ ক্যাশ ইনশিয়েটিভ পাবেন।
মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি ১০ শতাংশের নিচে আানা হবে জানিয়ে বেজা, বিডা এবং হাইটেক পার্ক প্রভৃতি কর্তৃপক্ষকে আরো ক্ষমতায়নের পরামর্শ দেন তিনি।
নীতিমালার সংষ্কার এবং বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো একান্ত আবশ্যক বলে মত প্রকাশ করে পবন চৌধুরী বলেন, বেজা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত কম মূল্যে জমি প্রদান করছে, যা ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক কম। বাণিজ্য সম্প্রসারণে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশস্থ জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি বলেন, জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। ২০১৯ সালে এশিয়াতে জাপানি বিনিয়োগ ছিল ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বাংলাদেশে ০.০৯ শতাংশ জাপানিজ বিনিয়োগ এসেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর ভিত্তিক অর্থনীতি এবং এশিয়া অঞ্চলে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনে জাপানের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে ট্যাক্সেশন, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ রিফর্ম গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও আমরা সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি।
তিনি জানান, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাতে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে, যেখানে মার্কিন বিনিয়োগের পরিমাণ ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ডিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ওয়ার্ল্ড ইনেভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২০-এর তথ্য মতে, কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালে বিনিয়োগ ৪০ শতাংশ কমে, ১.৫৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়াতে পারে। ফলে আমাদের মতো উন্নয়শীল দেশে কোভিড পরবর্তী সময়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমে যেতে পারে।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান ড. এম. মাশরুর রিয়াজ। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন পণ্য উৎপাদন, উদ্ভাবন, অবকাঠামো, বাজার ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষমতা বাড়ানো ওপর আরো বেশি হারে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
এছাড়াও তিনি প্রত্যাশিত বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে কমপ্লায়েন্স, দক্ষ মানবসম্পদ, পণ্য পরিবহনে সহজতর প্রক্রিয়া, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতিমালা সমূহের মধ্যে সমন্বয় এবং দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন।
ওয়েবিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশস্থ মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন জোয়ান ওয়াগনার, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, বিল্ড-এর চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান, জেট্রো’র বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি ইউজি এন্ডো, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মহিউদ্দিন মোনেম, অ্যামচেম-এর সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, স্যামসং-ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আলম আল মাহবুব অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২০
ইএআর/এমজেএফ