বান্দরবান: বান্দরবানে দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ছাদবাগান। পুরনো ছাদ বাগানগুলোর পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেক পরিবার।
করোনা আর লকডাউনের প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে স্থবিরতা নেমে এলেও পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ছাদ বাগানে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে অনেক পরিবার। লকডাউন আর করোনার কারণে এখন অধিকাংশ পরিবার অবসর সময়কে কাজে লাগিয়েছে তাদের ছাদের বাগানে। কেউ পুরনো বাগান পরিচর্যায় ব্যস্তসময় পার করছেন আবার কেউবা নতুন করে ফুল-ফল আর শাক-সবজির বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
বান্দরবানের মেম্বার পাড়া ছাদ বাগানের মালিক মো. আলাউদ্দিন শাহরিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালে ভবনের উপর নতুন ছাদবাগান গড়ে তোলা এবং আগে থেকে গড়ে ওঠা বাগানের পরিচর্যায় আগ্রহ বেড়ে গেছে আমাদের। নিত্যনতুন ফল ফুলের গাছ লাগাচ্ছি এবং সেগুলোর পরিচর্যা করে যাচ্ছি। বাগান পরিচর্যার কারণে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও ফুল উৎপাদন হচ্ছে, যার কারণে ছাদ বাগানের প্রতি দিনদিন আগ্রহ বাড়ছে আমার পরিবারের।
বান্দরবানের মেম্বার পাড়া এলাকায় ছাদবাগান করেছেন ফাতেমা বিনতে আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবানে দিনদিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ছাদ বাগান। আমি আমার ছাদে বিভিন্ন রকমের ফুল ও ফলের চারা লাগিয়েছি আর সেগুলোর পরিচর্যা করছি নিয়মিত।
ফাতেমা বলেন, আমার বাগানে দেশি ফুলের চারার পাশাপাশি বিদেশি ফুলের চারা রয়েছে। বিভিন্ন ফুলে ফলে আমার ছাদবাগান ভরে উঠেছে এবং আমার পরিবারের সবজির চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয় স্বজনদেরও উপহার দিচ্ছি।
ছাদ বাগানের মালিক মোতালেব হোসেন বাংলানিউজকে জানান, অফিসের কাজ সেরে অবসর সময়টুকু ছাদবাগানে ব্যয় করে থাকি। বাগানে কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই এবং এতে করে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা যায়। মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিয়ে গাছগুলো বেড়ে উঠছে, প্রতিদিন পরিচর্যা করে যাচ্ছি, এতে করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি এবং বাগান গড়তে কিংবা পরিচর্যা করতে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিচ্ছি।
ছাদবাগান প্রেমী আহসানুল হক রুমো বাংলানিউজকে বলেন, নার্সারি থেকে ফুলের চারা সংগ্রহ করে থাকি। প্রতিদিন পরিচর্যা করা এবং দুই বেলা পানি দেওয়া ও এক সপ্তাহ পর পর বাগান পরিষ্কার রাখতে হয়, গাছে মূলত দেওয়া হয় জৈব সার।
এছাড়া কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। ছাদবাগানে এখন পাখির আনাগোনাও বেড়েছে, ভোরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ভাঙে ঘুম। বিকেলে ছাদবাগানে এসে সময় কাটাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। পরিবারের সদস্যদের বিষমুক্ত খাদ্যের জোগান দিতে এই বাগান গড়েছি, আবার মন খারাপের সময়গুলোতে বাগানের সজীব পাতাগুলো যখন পূব হাওয়াতে দোল খায়, তখন মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।
ছাদবাগান করে এখন বিভিন্ন পরিবার তাদের সৌখিনতার পাশাপাশি মিটাচ্ছে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা। ছাদে লাউশাক, পুঁইশাক, পেয়ারা, জাম, লেবু, কমলার পাশাপাশি চাষ শুরু করেছে নানা রংয়ের বাহারি ফুলের।
এদিকে পরিবেশ রক্ষায় ছাদবাগান সম্প্রসারণে নানা পরার্মশ ও সহায়তার কথা জানালেন বান্দরবান কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবানে দিন দিনই ছাদ বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। আগে তেমন ছাদবাগান দেখা না গেলেও এই করোনার সময়ে বান্দরবানে ছাদবাগানের সংখ্যা বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, যারা ছাদবাগান করছেন তারা বান্দরবান কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছেন এবং তাদের বাগান করার নানামুখি দিকনিদের্শনা দেওয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ওমর ফারুক আরো বলেন, বিভাগীয় শহরে ছাদ বাগান করার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলেও জেলা পর্যায়ে এ ধরনের সুযোগ সুবিধা এখনও দেওয়া হচ্ছে না। তবে আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি আর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাদবাগানে পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়া হলে এই বাগান পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এলাকার কৃষি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২০
আরএ