ঢাকা: করোনা মহামারি চলাকালে রাজধানীর উত্তরায় আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করলেন বাড়িওয়ালা। শুধু তাই নয়, ১০ বছরের চুক্তি থাকার পরও উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়ির দুটি ফ্লোরে থাকা ‘প্রিমিয়াম সুইটস্’-এর শোরুমের সব সরঞ্জাম লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
দফায় দফায় উত্তরা পূর্ব থানায় এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পরও বাড়িওয়ালা তানভীর আহমেদের এমন কর্মকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী। প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আশপাশের ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, আবিন্তা হাইটসের প্রথম ও দ্বিতীয়তলা ১০ বছরের জন্য অগ্রিম ১৮ লাখ টাকা জমা সাপেক্ষে মাসিক ৩ লাখ টাকা ভাড়ায় ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল তানভীর আহমেদের সঙ্গে চুক্তি করেন প্রিমিয়াম সুইটস্ কর্তৃপক্ষ। তবে করোনা মহামারিতে সরকার নির্দেশিত লকডাউনের কারণে এপ্রিলের ভাড়া না দেওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানে তালা মেরে দেন বাড়িওয়ালা। প্রিমিয়াম সুইটস কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় বাড়িওয়ালাকে অনুরোধ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। উল্টো বাড়িওয়ালা তাদের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেন। এ বিষয়ে প্রথমে ২৫ জুলাই উত্তরা পূর্ব থানায় একটি ডায়েরি (জিডি) করেন প্রিমিয়াম সুইটস বাই সেন্ট্রালের অপারেশন ম্যানেজার নুরুজ্জামান খান।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক ধস নামার কারণে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এ কারণে তারা চুক্তি অনুযায়ী শুধু এপ্রিলের ভাড়া পরিশোধের বিষয়ে ১২ এপ্রিল আবিন্তা হাইটস কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি পাঠান। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন-পরবর্তী তাদের অফিস ও অ্যাকাউন্টস বিভাগ চালু হলে তারা নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করবেন বলে চিঠিতে জানান। এ চিঠি পাওয়ার পর আবিন্তা হাইটস পাল্টা আরেকটি চিঠি দিয়ে তিন কর্মদিবসের মধ্যে এপ্রিলের ভাড়াসহ অন্যান্য চার্জ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। শুধু এক মাসের ভাড়া না দেওয়ায় তাদের শাখাটি তালাবদ্ধ করে দেন। যদিও শাখাটি ভাড়া নেওয়ার সময় অগ্রিম ও সিকিউরিটি বাবদ ১৮ লাখ টাকা জমা ছিল।
জিডিতে আরও উল্লেখ করেন, গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) লকডাউন শিথিল করে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে মর্মে আদেশ জারি করলে প্রিমিয়াম সুইটস কর্তৃপক্ষ ওই শাখাটি খুলতে চাইলেও তাতে সাড়া দেয়নি আবিন্তা হাইটস্ কর্তৃপক্ষ। উল্টো গেট ও বিল্ডিংয়ের মূল গেট তালাবদ্ধ করে রেখে তাদের বিল্ডিং ছেড়ে দেওয়ার চাপ দেন।
এদিকে, দুই দফা জিডি করার পরও আবিন্তা হাইটস থেকে কোনো সাড়া না দিলে গত ২৬ জুলাই আদালতে মামলা করেন। আদালত ২৭ জুলাই শুনানি শেষে জোরপূর্বক উচ্ছেদ না করার জন্য ভবন কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
এ বিষয়ে সোমবার (৩১ আগস্ট) ভুক্তভোগী প্রিমিয়াম সুইটসের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মাহবুবুর রহমান বকুল বলেন, দফায় দফায় আমরা পুলিশকে অবহিত করার পরও কোনো উপায় না পেয়ে আদালতের আশ্রয় নিতে বাধ্য হই। এরপর আদালতের রায়ের কপি ৩০ জুলাই রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে এবং ৮ আগস্ট ইমেইলের মাধ্যমে তানভীর আহমেদের কাছে পাঠানো হয়। থানাকেও অবহিত করেছি। এরপর গত ১০ আগস্ট থেকে ওই ভবনে আমাদের শোরুমের কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে আমরা শোরুমটি সাজিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, আবিন্তা হাইটস থেকে দফায় দফায় হুমকির কারণে আমরা গত ৯ জুন এবং ২৫ জুলাই উত্তরা পূর্ব থানায় জিডি করতে বাধ্য হই। আবিন্তা হাইটস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের ১০ বছর চুক্তি থাকা সত্বেও তারা চুক্তি বহির্ভূতভাবে গত ২০ জুলাই মাত্র সাত দিনের সময় দিয়ে শোরুমটি ছেড়ে দিতে আমাদের একটি ইমেইল দেয়।
এ বিষয়ে জানতে আবিন্তা হাইটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদের সঙ্গে মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগ চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি এবং আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২০
এজেডএস/ওএইচ/