ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৫ থেকে ৫ হাজারে মাইওয়ান-মিনিস্টার

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০
৫ থেকে ৫ হাজারে মাইওয়ান-মিনিস্টার মাইওয়ান-মিনিস্টার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম.এ.রাজ্জাক খান

ঢাকা: মাত্র পাঁচজন সহকর্মী আর পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করে মাইওয়ান ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কালের পরিক্রমায় দেশীয় এ প্রতিষ্ঠান আজ সরাসরি জড়িত পাঁচ হাজার সদস্যের একটি পরিবারে পরিণত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠাতা এম.এ.রাজ্জাক খান রাজের নেতৃত্বে মাইওয়ান থেকে জন্ম নিয়েছে আরও বড় প্রতিষ্ঠান— মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেড। কেমন ছিল প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ এ পথ, বিভিন্ন বাঁধা পেরিয়ে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের পেছনের গল্পটা কেমন; বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সে কথাই জানিয়েছেন রাজ্জাক খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাওন সোলায়মান।

মাইওয়ানের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

উচ্চ মাধ্যমিক শেষে উচ্চতর শিক্ষার জন্য সিঙ্গাপুর চলে যাই। কিন্তু সবসময়ই ইচ্ছে ছিল দেশে কিছু করার; দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। তাই ১৯৯৯ সালে পড়াশোনা শেষ হলে চলে আসি। সেসময় বিশ্বমানের একটি দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের অভাব বোধ করি। আমিসহ পাঁচজন মিলে ‘মাইওয়ান’ এর যাত্রা শুরু করি। তখন আমাদের মূলধন ছিল মাত্র পাঁচ লাখ টাকা। তখন মূলত অ্যাসেম্বল (সংযোজন) করতাম। এরপর আস্তে আস্তে নিজেরাই ম্যানুফ্যাকচারিং (উৎপাদন) শুরু করি।

উত্তরাধিকার সূত্রে আপনি বেশ সচ্ছল পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। নিজেকে আলাদা করে ব্যবসা করতে হবে, উদ্যোক্তা হতে হবে এমন উদ্দেশ্য লীভাবে আসলো?

এটা সত্য যে পারিবারিক ভাবে আমরা বেশ সচ্ছল ছিলাম। উত্তরাধিকার সূত্রে আমার বাবা অনেক সম্পত্তির মালিক ছিলেন। কিন্তু নিজের কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিল আমার। বিদেশ থেকে শিক্ষা অর্জন করেছি, সেটাকে দেশের মানুষের জন্য আরও বড় পরিসরে কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম। যেহেতু সিঙ্গাপুরে আমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করেছি, তাই বিষয়ের সঙে সামঞ্জস্য রয়েছে, এমন কিছু করলে ভালো হবে বলে মনে হয়েছিল। সেসময় ইলেকট্রনিক্স পণ্যের অনেক দাম ছিল, বিশেষ করে টিভির। আমার উদ্দেশ্যই ছিল দেশের মানুষের মধ্যে এমন এক ধরনের টিভি নিয়ে আসা, যেটা মানের দিক থেকে আন্তর্জাতিক মানের কিন্তু দামের দিক থেকে দেশের মানুষের সাধ্যের নাগালে।

মাইওয়ান থেকে মিনিস্টার কীভাবে হলো?

শুরুতেই আমরা ‘মাইওয়ান ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে যাত্রা করি। তবে প্রথম দিক থেকেই আমরা আরও একটি নাম খুঁজছিলাম যা আমাদের সাধারণ মানুষের আরও কাছে নিয়ে যাবে। তখন ‘মিনিস্টার’ নামটা আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। এর অর্থ মানুষের জন্য কাজ করা। এটাই আমাদের ব্যবসার মটো। তাই এই নামই দিয়েছি। এখন আমাদের ‘মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেড’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে।

২০০২ থেকে ২০২০: উন্নতির দিকগুলো নিয়ে কী বলবেন?

২০০২ সালে আমরা টিভির উৎপাদন দিয়ে শুরু করি। প্রথমে সাদাকালো টিভি এরপর রঙিন। এখন তো বেসিক এলইডি, স্মার্ট এবং ফোর-কে টিভি উৎপাদন করছি আমরা। ২০০৫ সালে ফ্রিজ অ্যাসেম্বলিং শুরু করি আমরা। ২০১৩ সাল থেকে আমরাই ম্যানুফ্যাকচারিং করছি। ২০১৭ সাল থেকে এসি উৎপাদন করছি। এছাড়া, আরও বিভিন্ন ধরনের হালকা ও মাঝারি হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদন করছি আমরা। গড়ে মাসে এক লক্ষাধিক ইউনিট ফ্রিজ, এসি আর টিভি প্রায় আরও অর্ধলক্ষাধিক— সব মিলিয়ে প্রায় দুই লক্ষাধিক ইউনিট ইলেকট্রনিক্স আইটেম আমরা উৎপাদন করছি। আমরাই প্রথম ফ্রিজ এবং এসিতে ১২ বছর এবং টিভিতে ৭ বছর (প্যানেলে ৪ বছর) ওয়ারেন্টি সেবার ঘোষণা দেই।

লোকবল নিয়ে যদি বলি সরাসরি প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ এখন মাইওয়ান-মিনিস্টারের সঙ্গে আছে। দেশের সব জেলায় আমাদের নিজস্ব শোরুম অথবা ডিলার ফ্র্যাঞ্চাইজিং শোরুম রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজারের বেশি। বাজারের দিক থেকে বলতে গেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখন আমরা দ্বিতীয় অবস্থানে আছি।

শুরুতে কী ধরনের বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছিল?

সত্যি কথা বলতে, শুরুর দিকে তেমন কোনো বাঁধাই ছিল না। আমার মনে আছে, আমরা প্রথম মাত্র ১০ ইউনিট টিভি উৎপাদন করেছিলাম। ছোট স্কেলে ছিল বলেই হয়তো সেভাবে কোনো বাঁধা পাইনি। কিন্তু যখন বড় হতে গেলাম তখন বেশকিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে দক্ষ টেকনিশিয়ান পাচ্ছিলাম না কারণ তখন স্থানীয়রা এ কাজ সম্পর্কে জানতেন না। বিদেশ থেকে টেকনিশিয়ান নিয়ে এসে স্থানীয়দের কাজ শিখিয়েছি। এরপর ব্যাংক ঋণ, ট্যাক্স এসব বিষয়ে সমস্যা হচ্ছিল। এখন তো দিনে দিনে একটা ট্রেড লাইসেন্সও পাওয়া যায়। সেসময় তো এসব কাজ এত ডিজিটাল বা আধুনিক ছিল না। তবে ইচ্ছা ছিল, সাহস ছিল, তাই বাঁধা অতিক্রম করতে পেরেছি।

মাইওয়ান-মিনিস্টারের সামনের পথচলা কেমন হবে?

দেশের স্বার্থে দেশের মানুষের প্রয়োজনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সামনেও করে যেতে চাই। কোভিড এর সময় আমরা খুব দ্রুততার সঙ্গে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি এনে সার্জিক্যাল মাস্ক উৎপাদন করতে শুরু করি। এটার গুণগত মান খুবই ভালো এবং অনুমোদন প্রাপ্ত। আমরা ভেন্টিলেটর উৎপাদন শুরু করি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের ইচ্ছা আছে আমাদের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, ইলেকট্রনিক্স পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে যদি কর রেয়াত দেওয়া হয়, তাহলে আমরা কম খরচে এসব পণ্য উৎপাদন করে বাইরের দেশে রপ্তানি করতে পারবো। পাশাপাশি শুরুর দিকে রপ্তানিতে আমাদের বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়ার অনুরোধ করছি আমরা কারণ বিদেশে রপ্তানির বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জিং। এছাড়া, আগামী ১০ বছরে অর্থ্যাৎ ২০৩০ সাল নাগাদ আমাদের প্রতিষ্ঠান এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের যোগান দেবে; এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

সর্বশেষ প্রশ্ন, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

আমার একটাই পরামর্শ থাকবে আর সেটি হচ্ছে— উদ্যোক্তা হতে গেলে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি এবং সাহস থাকতে হবে। নিজের ইচ্ছা অর্থ্যাৎ লক্ষ্যের ওপর বিশ্বাস রেখে সাহসের সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০
এসএইচএস/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।