রাজশাহী: রাজশাহীতে প্রতি বছর প্রায় ১৭শ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয়। মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন-বিক্রির সঙ্গে জেলার প্রায় ৯ লাখ মানুষ জড়িত।
লকডাউন তুলে নেওয়ার পর মাছের বাজার স্বাভাবিক হয়েছে। আগের তুলনায় ছোট-বড় সব ধরনের মাছের দাম কম হলেও বিক্রি হচ্ছে পুরোদমে। ফলে লোকসান কাটিয়ে মাছ চাষে সুদিনের আশা করছেন রাজশাহীর চাষিরা।
রাজশাহী মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, জেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে মোট ৫০ হাজার পুকুর রয়েছে। এখানে বছরে মাছ উৎপাদন হয় প্রায় ৮৪ হাজার টন। আর স্থানীয়ভাবে মাছের চাহিদা রয়েছে ৫২ হাজার টন। ফলে রাজশাহীতে চাহিদার বিপরীতে ৩২ হাজার টন বেশি মাছ চাষ হয়।
উৎপাদিত মাছের প্রায় ৮৫ শতাংশ কার্প জাতীয় মাছ। দেশের মধ্যে কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদনে শীর্ষে রাজশাহী। রাজশাহীর চাহিদা পূরণ করে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ ট্রাক তাজা মাছ ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া রংপুর ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন আরও ৫০ ট্রাক মাছ সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি ট্রাকে ৭শ থেকে ৮শ কেজি মাছ ধরে।
রাজশাহীর মাছচাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, লকডাউন চলাকালীন রাজশাহী থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ ট্রাকের বেশি মাছ সরবরাহ করা সম্ভব হতো না। চাহিদা না থাকায় মাছের কাঙ্ক্ষিত দামও পাননি চাষিরা। এছাড়া মাছ পরিবহনের ক্ষেত্রেও নানা জটিলতার মধ্যে পড়েছেন তারা। লকডাউন তুলে নেওয়ার পর বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম এখনো কম। কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে মাছ বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার দাদপুর এলাকার মাছচাষি রহমত উল্লাহ বলেন, আমার ৩০ বিঘা জমিতে ৫টি পুকুরে ৯০ লাখ টাকার মাছ রয়েছে। লকডাউনের সময় দাম কম থাকায় মাছ বিক্রি করতে পারিনি। লকডাউন তুলে নেওয়ার পর গত মাসে ১৪ লাখ টাকার মতো মাছ বিক্রি করেছি।
পবা উপজেলার বাগধানী এলাকার রাশেদুল ইসলাম জানান, লকডাউনের আগে দুই কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি করেছি ৩২০ টাকা কেজি দরে। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ২৭০ টাকা কেজি দরে। কেজিতে এখনো ৪০ থেকে ৫০ টাকা দাম কম।
বাগমারার ঝিকরা গ্রামের মাছ চাষি লুৎফর রহমান জানান, লকডাউনের পর ৪টি পুকুরের মাছ বিক্রি করেছি। প্রায় দশ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে এ পর্যন্ত। পুকুরের আরও বিক্রির উপযোগী মাছ রয়েছে। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন মাছগুলো বিক্রি করবো।
জানতে চাইলে রাজশাহীর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, খামারি, নার্সারি ও হ্যাচারি- তিনটি পর্যায়ে রাজশাহীতে মাছ চাষ করা হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে মৎস্য খাতের তিনটি পর্যায়ে প্রায় ১শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতির তালিকা মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো প্রণোদনা আসেনি। তবে কৃষিখাতের ৪ শতাংশ হার সুদে প্রণোদনার প্যাকেজ অনেক মৎস্যচাষি পেয়েছেন। আশা করছি বাজার আরও স্বাভাবিক হলে চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
এসএস/এএ