ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড (বিএটি) ও জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) ছোট কোম্পানিগুলোকে ধ্বংস করার মিশনে নেমেছে।
নিম্ন স্ল্যাবের সিগারেট কম মূল্যে বিক্রি করে এ দুটি বহুজাতিক কোম্পানি বাজারে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একটি দেশীয় সিগারেট কোম্পানির ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিম্ন স্ল্যাবের এক হাজার শলাকা সিগারেট সংশ্লিষ্ট কোম্পানির উৎপাদন খরচ, লাভ ও রাজস্ব সহ ৩ হাজার ৯০০ টাকা রাখতে হয়। কিন্তু অভিযুক্ত দুই কোম্পানি বিক্রি করছে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাজার তদারকি করে এর সত্যতা পেয়েছে কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠিও দিয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, বিএটি ও জেটিআই’র নিম্ন স্ল্যাবের এক হাজার শলাকা সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রিতে খরচ ৩ হাজার ৮৬২ টাকা এক পয়সা। এর মধ্যে মৌলিক কাঁচামাল ৩৪২ টাকা ২৮ পয়সা, উৎপাদন খরচ ৭১ টাকা ৫৮ পয়সা, প্রশাসনিক খরচ ৩৪ টাকা, বিপণন খরচ ৩৬৫ টাকা, সুদ ও অন্যান্য ১৯১ টাকা ৬২ পয়সা, সারচার্জ (এক শতাংশ) ১০ টাকা ৫৩ পয়সা এবং সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও স্বাস্থ্য কর ৭৩ শতাংশ হিসেবে দুই হাজার ৮৪৭ টাকা।
পক্ষান্তরে উৎপাদন একই হলেও অন্যান্য দেশীয় কোম্পানি এক হাজার শলাকা সিগারেট বিক্রি করে ৩ হাজার ৯০০ টাকায়। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন স্ল্যাবের এক হাজার শলাকা সিগারেটের দাম ৩ হাজার ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ ও সারচার্জ এক শতাংশসহ মোট কর হার ৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ মোট করের পরিমাণ প্রতি হাজার শলাকায় দিতে হয় ২ হাজার ৮৪৭ টাকা। প্রতি হাজারে কর দেওয়ার পর আয় ১ হাজার ৫৩ টাকা।
অভিযুক্ত দুটি বহুজাতিক কোম্পানি কমে দামে নিম্ন স্ল্যাবের সিগারেট বাজারজাত করার ফলে দেশীয় কোম্পানিগুলোও লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে প্রতি হাজার শলাকা সিগারেট বিক্রির ক্ষেত্রে ৩৬২ টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
এনবিআরে পাঠানো কমিশনারেটের চিঠিতে জানানো হয়, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড (একেটিসিএল) এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাজার যাচাই করে দেখা গেছে- নিম্ন স্ল্যাবের সিগারেট ৪শ টাকা কম দামে বিক্রি করার ফলে রাজস্ব আহরণ কমে গেছে। একেটিসিএল ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করেছে, যা কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের মোট আহরিত রাজস্বের ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় এ প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আহরণ হ্রাস পেয়েছে ১৬০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা প্রবৃদ্ধির হিসাবে ৮ শতাংশ।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬-০৭ অর্থবছর পর্যন্ত বহুজাতিক কোম্পানি ছিল বিএটি এবং দেশীয় সিগারেট কোম্পানি ছিল ১৫টি। মোট সিগারেট বাজারের ৭০ শতাংশ ছিল দেশীয় কোম্পানির। আর বিএটি’র ছিল ৩০ শতাংশ। তবে নিম্ন স্ল্যাবের সিগারেটের শতভাগ বাজার ছিল দেশীয় কোম্পানির। বর্তমানে দেশীয় ২৪টি ও বহুজাতিক দুটি কোম্পানি নিম্ন স্ল্যাবের সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। দেশীয় কোম্পানির মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে ৪-৫টি কোম্পানি। বহুজাতিক কোম্পানি বিএটি ও জেটিআই ৯১ শতাংশ বাজার দখলে নিয়েছে।
এদিকে অভিযোগ পেয়ে মাঠে নেমেছে কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিস। কুমিল্লা কমিশনারেটের অধীনে ৬ জেলার কুরিয়ার সার্ভিসগুলোয় ১৮২টি অভিযান পচিালনা করা হয়। এর মধ্যে ২৮টি সফল হয়। অবৈধ সিগারেট ও বিড়ির বিরুদ্ধে ৪০টি অভিযান পরিচালিত হয়। এতে ১৬টি অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিড়ি সিগারেট জব্দ করা হয়। মামলা করা হয় ১৫টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
এসি/এমআর/টিসি