ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আমদানির চাল এলে দাম কমতে পারে বস্তায় ১৫০ টাকা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২১
আমদানির চাল এলে দাম কমতে পারে বস্তায় ১৫০ টাকা

ঢাকা: গত কয়েকদিনে দেশের চালের বাজারে আগুন। সব ধরনের চালের দাম বাড়তি।

চাল কিনতেই নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিদেশ থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সে চাল এখনো আসেনি বাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল আমদানির ঘোষণা দেওয়ার পর চালের দাম কিছুটা হলেও কমেছে। আর আমদানি করা চাল পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজারে এলে এবং তার সুষ্ঠু ব্যবহার হলে দাম আরো কমবে।

ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের বড় বড় চালকল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণেই বেড়েছে চালের দাম। অন্য সময় বাজারে নতুন চাল এলে যেখানে চালের দাম ৫ থেকে ৮ টাকা কমে যায়, এবার সেখানে ঘটনা হয়েছে ঠিক উল্টো। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ নতুন চাল এলেও বেড়েছে দাম।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চালের ক্রেতা আব্দুল হক বলেন, যে চাল ছিল ২৫শ টাকা বস্তা, এখন তা ৩২শ টাকা। কৃষক আর গৃহস্থরা নাকি ধান বিক্রি করে চাষের টাকা তুলতে পারছেন না, আবার আমরা এদিকে চাল কিনে খেতে পারছি না। একদিকে চালের দাম বাড়ছে, আবার বাড়ছে তেলের দাম। সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং করলে এমনটা হতো না।  

‘আমি বাজারে নিয়ে আসি পাঁচ হাজার টাকা, এসে দেখি সেই বাজার করতে লাগে নয় হাজার টাকা। শুধু অবকাঠামোর উন্নয়ন তো আর দেশের উন্নয়ন হতে পারে না। দেশের ভেতরের অবস্থারও উন্নতি প্রয়োজন। শুনছি চাল আমদানি হবে, কিন্তু তা কতটা উপকারে আসবে তা নিয়ে এখনো দ্বিধা রয়ে যায়। ’

চাল কিনতে গিয়ে যেমন হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা, তেমনি বিক্রি করতে গিয়েও ক্রেতাদের নানান ধরনের প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছেন বিক্রেতারা। তাদের মতে, দেশে এখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলেও চালের বাজারের যে অবস্থা, তা প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীরা দুষছেন সরকারপক্ষকেও। তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের অভাব এবং বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারাটা চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।  

এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের চালের ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ১০/১৫ দিন আগে চালের দাম বেড়েছে ৩শ টাকা। এখন আমদানির ঘোষণা দেওয়ার পর দাম কমেছে ৩০ টাকা। এখন আবার তারা (মিল মালিকরা) বলছেন আগে দেখি বাইরের চাল কী পরিমাণ আসে, তারপর সিদ্ধান্ত। ফলে বোঝাই যাচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ইচ্ছা করেই এই বাজারটা ধরে রেখেছে।

ঢাকার ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়ার সঙ্গে জড়িত কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা ঢাকার মার্কেটে যারা ব্যবসা করি, তাদের এখানে প্রতিদিন সরকারের পক্ষ থেকে ভোক্তা অধিকার, ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ অন্য সংস্থা নিয়মিত মনিটরিং করে। আমাদের কেনা কত করে, আমরা কত টাকায় বিক্রি করি, তারা কিন্তু এগুলোর পেপারস দেখে। তারা এটাও দেখে কোন মিল থেকে আমরা এনেছি। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। আমরা সম্পূর্ণ নিরূপায়। আমাদের হাতে এখানে কিছু নেই। মিল থেকে কমে কিনতে পারলে আমরা কমে বিক্রি করি, বেশিতে কিনতে হলে বিক্রিও বেশিতে। এই বাজারটা সম্পূর্ণই মিল মালিকদের হাতে।

জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের চালের বাজার কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী হয়ে গিয়েছিল। সরকার আমদানির ঘোষণা দেওয়ার পর সেটি স্থির হয়েছে। মিল মালিকরা বস্তাপ্রতি ৩০ টাকা কমিয়েছেন। এখন যদি বাইরে থেকে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ আসে, তবে আমার মনে হয় বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হবে।

এই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ বলেন, বাইরে থেকে শুধু চাল আমদানি করলেই বাজার স্বাভাবিক হবে না। একইসঙ্গে থাকতে হবে পর্যাপ্ত মনিটরিং। কেননা দেখা গেলো চাল এলো প্রচুর পরিমাণে, কিন্তু যারা আমদানি করছেন তারাই আবার মজুদ করতে শুরু করলো, সেক্ষেত্রে সমস্যা আরও বাড়বে। তাই আমদানির পাশাপাশি বাজার মনিটরিংও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের তো মজুদের সিস্টেম নেই। সঠিক মনিটরিং হলে এবং চালের আমদানি বাড়লে দাম কমবে বলেই আশা করা যায়।

এদিকে দেশের মোট চালের একটি বড় অংশের যোগান আসে কুষ্টিয়ার খাজানগর থেকে। নতুন চাল আমদানি এবং দেশি চালের দাম কমা নিয়ে কুষ্টিয়ার অটো রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ওমর ফারুকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ধানের যোগান কম থাকার ফলেই মিল মালিককরা চালের মূল্য বাড়াতে বাধ্য হন। এটি ইচ্ছাকৃত কিছু নয়। এমনিতেই চালের দাম কিছুটা কমেছে। আমদানি করা নতুন চাল বাজারে এলে চালের দাম বস্তাপ্রতি আরও ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

তিনি যোগ করেন, চালের দাম আরো কমতে পারতো। তবে আমদানির জন্য সকরকারে প্রতিকেজি চালে ১২ টাকা শুল্ক দিতে হবে। যদিও সরকার শুল্কের পরিমাণ কিছুটা কমিয়েছে, তবুও সম্পূর্ণ শুল্ক বাদ দিলে চালের দাম বস্তাপ্রতি আরও ৬শ টাকা কমে যেত। তবে সেক্ষেত্রে কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২১
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।