ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ক্যাশ আউট চার্জ যৌক্তিক পর্যায়ে নেমে আসবে কবে? 

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২২ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২১
ক্যাশ আউট চার্জ যৌক্তিক পর্যায়ে নেমে আসবে কবে? 

ঢাকা: দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার জন্য ২০১১ সালে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। পেমেন্ট সিস্টেম প্রযুক্তির বিকাশ ও মোবাইল কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্ক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সহজ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুর দিকে সেবা প্রদানের জন্য ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করলেও বর্তমানে ১৫টি কোম্পানি ব্যাংকের অধীনে সেবা প্রদান করছে। তবে বাজারে রয়েছে ৪ থেকে ৫টি প্রতিষ্ঠান। অন্যদের কার্যক্রম সীমিত আবার কেউ কেউ সেবা প্রদান করছে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে।

চাহিদা ও সরবরাহ সঠিকভাবে কাজ না করায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অধিক চার্জ আরোপের অভিযোগ রয়েছে।

সহজলভ্যতা, অনেক গ্রাহক, এজেন্ট ও আস্থার জায়গা থেকে মাত্র কয়েকটি কোম্পানির দখলে রয়েছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের বাজার। ফলে তারা বাজারে অলিগোপলি খেলোয়াড়ের মতো আচরণ করছে।

দেশের সবচেয়ে ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এমক্যাশের ক্যাশ আউট চার্জও বড় কোম্পানির মতো।

২০১৮ সালে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী বর্তমানে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, ব্যক্তিগত থেকে ব্যবসা, ব্যক্তিগত থেকে সরকারি হিসাবে লেনদেন করা যায়। তবে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা রেমিটেন্স পাঠানো ছাড়া অন্য কোনো লেনদেন করতে পারেন না।

দেশের আর্থিক বাজারে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রবর্তনের অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ এতে সেবার বাইরে থাকা অনেক মানুষ বিশেষ করে বয়স্ক ও মহিলাদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

ফলে তারা অর্থনীতির প্রসারে অবদান রাখছে। ব্যাংক সেবার বাইরে থাকা মানুষকে তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

কয়েকটি কোম্পানির সহজলভ্য সেবা, বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের আস্থা থাকায় তারা বাজারে শক্তি হিসেবে লেনদেন চার্জ অনেক বেশি নিচ্ছে।

এমএফএস প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে বিকাশ প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ নিচ্ছে অ্যাপের মাধ্যমে ১৭ দশমিক ৫০ টাকা, (ইউএসএসডি) ১৮ দশমিক ৫০ টাকা, রকেট প্রতি হাজারে ১৮ দশমিক ৫০ টাকা, শিওর ক্যাশ ১৮ দশমিক ৫০ টাকা, নগদ ১১ দশমিক ৪৯ টাকা।

“অন্যদের তুলনায় নগদ এর ক্যাশ আউট চার্জ কম হলেও এখন অপেক্ষা করতে হবে আর্থিক অর্ন্তভুক্তিতে তাদের উদ্যোগের সুফল জনগণের কাছে কতটুকু পৌছায়। ”

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দিন যাচ্ছে আর বেড়েই চলেছে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২হাজার ৪৬২ মিলিয়ন লেনদেন হয়েছে। টাকার পরিমান ৪হাজার ১২ বিলিয়ন টাকা। আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২হাজার ৩৫ মিলিয়ন লেনদেনে টাকার পরিমান ছিল ৩ হাজার ৪৮৩ বিলিয়ন টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লেনদেনের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৬১ মিলিয়ন। লেনদেনের পরিমান ২ হাজার ৭৭১ বিলিয়ন টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লেনেদের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৫৯ মিলিয়ন। লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৭১ বিলিয়ন টাকা।

এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. মনজুর হোসেন বলেন, আমার মতে, ক্যাশ আউট চার্জ দরিদ্র মানুষের পক্ষে খুব বেশি হওয়ায় এটি পুনর্নির্ধারণ করা উচিত। কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরও প্রতিযোগীতা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল অপারেটরদের এমএফএস সেবা প্রদানের অনুমতি দেওয়া উচিত।

মনজুর হোসেন বলেন, বর্তমানে বাজারে অনেক ব্যাংকের এমএফএস প্রদান রয়েছে। তাদের বিকাশের মত আলাদা কোম্পানি গঠন করা উচিত। অন্যথায় বাজার প্রতিযোগীতামূলক হবে না। বিকাশের মত আলাদা কোম্পানি না করলে বাজার ধরা খুবই কঠিন।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানে বাজারেরর ভারসাম্য রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও কঠোর হতে হবে।

অপর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত পরিমানে বিনিয়োগ করেছেন। আমরা চার্জ কমানোর বিষয়ে শিগগিরই এমএফএস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গর্ভনর ফজলে কবির চার্জ কমানোর জন্য কোম্পানিগুলো চাপ দিচ্ছেন। শিগগিরই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২১
এসই/এজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।