ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা বিশেষ করে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য সহযোগী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

তারা বলেন, লকডাউন ঘোষণা হলে রপ্তানি পণ্যের সঠিক সময়ে শিপমেন্ট (জাহাজীকরণ) নিয়েও শঙ্কা তৈরি হবে।

পাশাপাশি সামনে তিন মাসের মধ্যে মুসলমানদের দুইটা সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এখানে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে হবে। কারখানা বন্ধ থাকলে আমাদের বেতন-বোনাস ভাতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে। তাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চাই।

রোববার (১১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে পোশাকখাতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ইএবি’র যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‌জীবন-জীবিকার স্বার্থে, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে, শিল্প-কলকারখানাগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানাই। শ্রমিকরা কারখানার মধ্যে থাকলে সংক্রমণ হার কমবে। ইউরোপ, আমেরিকা, প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বে অনেক উন্নত রাষ্ট্রে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও সেখানে শিল্প-কলকারখানা চালু রয়েছে। তাই দেশেও চালু রাখতে হবে। আর শ্রমিকরা কারখানা সংলগ্ন স্থানেই থাকেন। সেক্ষেত্রে কারখানা চালু রাখা যেতে পারে। এটা না হলে রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়তে হবে। আবার বিশ্ববাজারও হারাতে হবে।

বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, লকডাউন ঘোষণা হলে রপ্তানি পণ্যের সঠিক সময়ে শিপমেন্ট (জাহাজীকরণ) নিয়েও শঙ্কা তৈরি হবে। অনেক শিপমেন্ট বাতিল হয়েও যেতে পারে। তখন ওইসব পণ্য হ্রাসকৃত দামে বিক্রি করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে তা স্টকও (মজুদ) হয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় বিশেষ ব্যবস্থায় শিপমেন্ট চালু রাখার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।

ইএবি সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শিদী বলেন, আমাদের জাতীয় শিল্প পোশাকখাত হলেও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়। লকডাউনে আমাদের কারখানা বন্ধ থাকলে রপ্তানি হবে না, এতে বাজার হারাতে হবে। কারণ প্রতিযোগী ভারত-ভিয়েতনামের কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত আছে। জীবন থাকলে অনেক কিছুই হবে আবার জীবিকারও প্রয়োজন আছে। সামনে তিন মাসের মধ্যে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এখানে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে হবে। কারখানা বন্ধ থাকলে আমাদের বেতন-বোনাস ভাতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে। তাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনা নিয়ন্ত্রণে ইউরোপ, আমেরিকা, ব্রাজিলের মতো রাষ্ট্রগুলো হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে আমাদের সমন্বয়ের অভাব নেই। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রেখেছি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আমরা প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হারিয়েছি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি হারিয়েছি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশেষ করে ওভেন খাতে রপ্তানি সংকট চরমে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। শুধুমাত্র মার্চ মাসে তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২০ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ আমাদের ১১৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান ৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিলের শিকার হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় সারা বিশ্বজুড়ে গৃহীত লকডাউন পদক্ষেপের কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পোশাকের খুচরা বিক্রিতে ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে ইউরোপের খুচরা বাজারে বিক্রি কমেছে ২৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ১৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে আমাদের পোশাকের ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে দরপতন অব্যাহত আছে। এমন সংকটে থেকেও আমাদের শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে যেতে হয়েছে এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়েছে।

বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইএয়ের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য (এমপি) শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআইএয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিকেএমইএ’র সভাপতি সেলিম উসমান, প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ, সহ-সভাপতি এম এ রহিম ফিরোজসহ তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।