ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

উৎসাহ বোনাস দেওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২১
উৎসাহ বোনাস দেওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ

ঢাকা: প্রতিবছর লোকসান দেওয়ার পরেও কর্মীদের উৎসাহ বোনাস দেওয়া ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়ে এসব ব্যাংকের অনিয়ম তুলে ধরেছে এবং লোকসান হওয়ার পরেও এ ধরনের বোনাস দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কয়েকটি শীর্ষ রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক নিয়মনীতি ভঙ্গ করে সর্বোচ্চ তিনটি উৎসাহ বোনাস দেয়। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকও রয়েছে।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের জন্য উৎসাহ বোনাস প্রদান সর্ম্পকিত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নীতিমালা প্রণয়নের ৬ বছর পার হলেও ব্যাংকগুলো তা অনুসরণ করছে না।  নিয়ম অনুসারে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দ্বারাপ্রাপ্ত নিট মুনাফার উপর ভিত্তি করে কর্মচারীদের উত্সাহমূলক বোনাস দেওয়া উচিত এবং ব্যাংকগুলো মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হলে কর্মীরা সেটা পাবে না।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, কেবল শ্রেণিকৃত ঋণ এবং অন্যান্য সম্পত্তির বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতির ব্যবস্থা করার পরে যখন তারল্যর অবস্থান সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকবে তখন কোনো ব্যাংক নিট মুনাফার ভিত্তিতে প্রণোদনা বোনাস দিতে পারবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) প্রভিশন অব্যহতি ব্যতীত মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। মুনাফা করতে না পারায় ২০১৩ সাল থেকে বেসিক ব্যাংক উৎসাহ বোনাস দেওয়া বন্ধ রেখেছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী উন্নয়ন ব্যাংকে উৎসাহ বোনাস দেওয়া বন্ধ রয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে। অপরদিকে, লোকসান হওয়া সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ডিসেম্বর ভিত্তিক হিসেবে প্রভিশন ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও উৎসাহ বোনাস দেওয়া অব্যহত রেখেছে।

২০২০ সালেও উৎসাহ বোনাস দিয়েছে সোনালী ব্যাংক:

ধারাবাহিক লোকসানের মধ্যে ২০১৯ সালের পর ২০২০ সালেও উৎসাহ বোনাস দেয় সোনালী ব্যাংক। উৎসাহ বোনাস সর্ম্পকিত নীতিমালার আলোকে অনুমতি ছাড়াই সোনালী ব্যাংকের লোকসান (প্রভিশন অব্যাহতি প্রদান ব্যতীত) হওয়া সত্ত্বেও উৎসাহ বোনাস দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠিতে উল্লেখ করেছে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক হিসাবে একমাত্র বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ছাড়া বাকি পাঁচটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে ১৩ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকিংখাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের ৪৮ শতাংশ। মূলধন ঘাটতি ও বিপুল পরিমান খেলাপি ঋণ থাকার পরেও চলতি বছরের ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় সোনালী ব্যাংক মূল বেতনের সমপরিমাণ চারটি উৎসাহ বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত করা উৎসাহ বোনাস প্রদান সর্ম্পকিত নীতিমালা অনুসরণ করেই বোনাস দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো যখন মুনাফা করবে তখই উৎসাহ বোনাস দেওয়া উচিত। যদি লাভ না করে তখন বিশেষ ভাতা দিতে পারে।

আতাউর রহমান প্রধান যুক্তি দিয়ে বলেন যে অনেক সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যৌক্তিক কারণে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) ছাড় দেয়, ফলে ব্যাংকগুলি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি না রেখেও লাভ দেখাতে পারে।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, কোনো ব্যাংক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে উৎসাহ বোনাস দিলে নীতিমালার আলোকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২১
এসই/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।